দুজনই একই জগতের বাসিন্দা। কিন্তু দেশ ভিন্ন। সংগীত জগতের কিংবদন্তী তারা। একজন পাকিস্তানের জীবন্ত কিংবদন্তী, কাওয়ালি সংগীতশিল্পী নুসরাত ফতেহ আলী খান। আরেকজন ভারতের কিংবদন্তী বাঙালি গায়ক ও নায়ক কিশোর কুমার। এই একই দিনে পকিস্তানিদের গর্ব হয়ে জন্মেছিলেন একজন, অন্যজন কোটি ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন পরপারে।
শুভ জন্মদিন নুসরাত ফতেহ আলী খান
১৯৪৮ সালের ১৩ অক্টোবর পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের এক পাঞ্জাবী পরিবারে জন্ম হয় ফতেহ আলী খানের। পিতা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কাওয়ালি সংগীতের প্রতি ব্যাপক ঝোঁক ও আগ্রহ ছিল ফতেহ আলীর। পরে ছেলের আগ্রহের কাছে নতি স্বীকার করেন পিতাও।
ইসলামের সুফিবাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ আধ্যাত্বিক সঙ্গীত কাওয়ালির জন্য বিশ্বনন্দিত ফতেহ আলী খান। তাঁর অসাধারণ কণ্ঠের ক্ষমতার জন্য তাঁকে রেকর্ডকৃত কণ্ঠে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি একটানা কয়েক ঘণ্টাযাবত একই তালে কাওয়ালি পরিবশেন করতে পারেন। প্রায় ৬০০ বছরের পারিবারিক কাওয়ালি ঐতিত্যের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে, তিনি কাওয়ালি সঙ্গীতকে বিশ্বসঙ্গীতে পরিণত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি শাহেন শাহ এ কাওয়ালি, যার অর্থ কাওয়ালির রাজাদের রাজা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
ওপারে ভালো থেকো কিংবদন্তী কিশোর কুমার
জন্ম ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট ভারতের বোম্বেতে। বাঙালি গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, স্ক্রিপ্ট লেখক, চিত্রনাট্য লেখক এবং রেকর্ড প্রযোজক হিসেবে উপমহাদেশের অদ্বিতীয় ব্যক্তি কিশোর কুমার। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বাধিক সফল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে পরিচিত তিনি।
বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন কিশোর কুমার। যার মধ্যে রয়েছে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালায়লম, ওড়িয়া, এবং উর্দু। এছাড়াও তিনি তার ব্যক্তিগত অ্যালবামেও বিভিন্ন ভাষায় গান করেছেন। বিশেষত তার বাংলায় গাওয়া গানগুলি সর্বকালের ধ্রুপদী গান হিসেবে বিবেচিত। তিনি আট বার শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়কের জন্য ‘ফিল্মফেয়ার পুরস্কার’ জিতেছেন এবং একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন। তাকে মধ্যপ্রদেশ সরকার কর্তৃক লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান করা হয়। এমনকি তাঁর নামে হিন্দি চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ‘কিশোর কুমার পুরস্কার’ প্রদানও চালু করা হয়।
সাধারণত গায়ক হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতাও ছিলেন। হিন্দি ও বাংলা মিলে প্রায় দশটি ছবিতে অভিনয় করেছেন কিশোর কুমার। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে উপমহাদেশের কিংবদন্তী এ সংগীতশিল্পীর।