গল্পের শুরুটা ২০০৯ সালে। ৫২ শতাংশ জায়গার উপর মাত্র ২০০ মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করেন
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার শাক্তা ইউনিয়নের হিজলা গ্রামের আফজাল হোসেন। জন্মসূত্রে তার বেড়ে ওঠা ব্যবসায়ী পরিবারে। বাবা ও বড় ভাই পোল্টি ফিডের ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকে তাদের দেখে নিজেও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন একদিন ব্যবসায়ী হবেন। মাধ্যমিক থেকেই মুরগির ব্যবসার প্রতি তার একটা ঝোঁক ছিল। সেই ঝোঁকই একদিন তাকে পেয়ে বসে। তা না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করে কেউ এই ব্যবসায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন! কেউ করেন কি না জানি না। তবে আফজাল হোসেন করেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন।
আফজাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসা ছিল আটি বাজারে। সেখানে পড়ালেখার ফাঁকে গিয়ে বসতাম। বাবা ও বড় ভাই কে একটু সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। আমাদের দোকান থেকে পোল্ট্রি ফিডের খামারিরা বাকি নিয়ে যেত। একটা সময়ে দেখা গেল লাখ লাখ টাকা খামারিদের কাছে বাকি পড়ে গেল, ব্যবসায় লস হতে থাকে। তখন আমার মাথায় আইডিয়া এলো আমি যদি পোল্ট্রি ফিডের খামার দিই তাহলে আর কাউকে বাকি দিতে হবে না।’
ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন এবং বাবা ও বড় ভাইয়ের পোল্ট্রি ফিডের লাখ লাখ টাকা বাকি থেকে উত্তরণের ত্রাতা হিসেবে উদয় হন আফজাল। মাত্র দুই’শ মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন পোল্ট্রি খামার। নাম রাখেন সোলস লিমিটেড এগ্রোফার্মা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার খামারে এখন তিন হাজার ২০০ মুরগির বাচ্চা রয়েছে। এই বাচ্চাগুলো আনা হয়েছে বগুড়া থেকে। বাচ্চাগুলো বিক্রির উপযুক্ত হবে ৬৫-৭০ দিন পরে। তখন এই বাচ্চা মুরগির ওজন ছিল ৮০০-৮৫০ গ্রাম। প্রত্যেকটি বাচ্চা বড় করতে খরচ হয় ১৫০-১৬০ টাকা। আর বিক্রি হয় ১৮০ টাকায়। উপযুক্ত হলে মুরগিগুলো বিক্রি হবে আটি বাজার, কৃষি মার্কেট ও ধানমন্ডির বিভিন্ন বাজারে।
আফজাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা যখন বাচ্চাগুলো কিনে আনি ৭০-৮০ টাকায়। অথচ সরকারি রেট কিন্তু ৩২ টাকা। সেই রেটে কিনতে পারলে আরও ভালো ব্যবসা হতো।’
সরকারি রেটে মুরগির বাচ্চা কিনতে পারলে আফজাল আরও বেশি লাভবান হতে পারতেন। তাকে ৭০-৮০ টাকা করেই মুরগির বাচ্চা কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া মুরগির বাচ্চাগুলো বগুড়া থেকে নিয়ে আসতে যাতায়াত ভাড়াও গুণতে হয় আফজালকে। এছাড়াও বাচ্চাগুলো বড় করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থাকে।
এ বিষয়ে আফজাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাচ্চা মুরগিগুলো বড় করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ঝঁকি থাকে। যেমন ধরেন ঠান্ডা লাগা ও অসুখ হওয়া এটা কমন ব্যাপার। সেই কারণে আমাদের খুব সর্তক থাকতে হয়। না হলে বিরাট লসের মধ্যে পড়তে হয়।’
সোলস লিমেটেড এগ্রোফার্মার অধীনে রয়েছে চারটি পোল্ট্রি খামার। এই খামারগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে আটজন লোকের। প্রতি মাসে আফজাল তার কর্মচারীদের বেতন গুণতে হয় ৭০ হাজার টাকা।
আফজালের পোল্ট্রি খামার দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে আশপাশেই গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন খামার। এদেরই একজন এমবিএ পাস করা আলামিন হোসেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সোলস লিমিটেড এগ্রো ফার্ম দেখে আমি ফার্ম করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। ভালোই চলছে। অথচ আমি চাকরি করলে কতই বা পেতাম। এর চেয়ে উদোক্তা হয়েছি এটা এখন গর্বের, কারণ অন্যদের চাকুরি দিতে পারছি।’
আফজালের অনুপ্রেরণা তার বাবা। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আবদুল বারেক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি ছেলেদের সবসময় বলেছি যাই করিস না কেন সেটা মন দিয়ে কর। কোনো কাজই ছোট নয়, শুধু মনটা বড় হলেই হয়। পড়াশোনা করা ছেলেরা যদি এসব সেক্টরে না আসে, ভালো কিছু আসবে কী করে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আফজালের বক্তব্য, ‘কেরানীগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি পিডের ডিলারশিপ হতে চাই। প্রত্যেকটা পিডের বস্তায় লাভ হয় ২০০ টাকা। আমি যদি প্রত্যেকদিন ৫০০-১০০০ বস্তা বিক্রি করতে পারি পার ডে দুই লাখ টাকা আয় হবে।’
প্রথা ভেঙে কোনো কাজ করতে গেলে সবাই বাধা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। তেমনটি হয়েছে আফজালের বেলায়ও। তার সাথে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, অনেকেই তাকে প্রথমদিকে মুরগির ব্যবসায়ী বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। কিন্তু কোনো তুচ্ছতাচ্ছিল্যই তাকে দমাতে পারেনি। তার স্বপ্ন ছিল উদোক্তা হবার। সেটাই তিনি হয়েছেন। এখন শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।