মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আগত রোহিঙ্গারা ১ মাসে ৭০০ একর বনভূমি উজাড় করে বসতি নির্মাণ কওে উখিয়া ও টেকনাফ মারাতœক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে । শতাধিক পাহাড় কেটে সাবাড় করে বসতি নির্মাণ, যততত্র মলমূত্র ত্যাগ, রাস্তার ধারে ত্রানের কাপড় ফেলে দেওয়া সহ সর্বত্র আর্বজনা ফেলে দুই উপজেলাকে দূর্গন্ধযুক্ত করে তুলেছে তারা । একদিকে একের পর এক পাহাড় কেটে পাহাড় ধসের শংকা বাড়িয়ে তুলেছে ২৫ আগষ্ট থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। অন্যদিকে নতুন আগত ৫-৬ লক্ষ রোহিঙ্গার পয়: নিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় যততত্র মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশকে করছে বিপর্যস্ত। পাশাপাশি লাখো মানুষের দেওয়া ত্রানের কাপড় রাস্তায় ফেলে দিয়ে মহাসড়কের দুই পাশকে নোংরা করছে নয়া রোহিঙ্গারা। একই সাথে যততত্র আবর্জনা ফেলে উখিয়া- টেকনাফকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলেছে তারা। আর এই পরিবেশ ধ্বংস ঠেকাতে আগত রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তরিত করতে হবে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ঠজনেরা।
সূত্র জানায়, ২৫ আগষ্ট থেকে উখিয়া- টেকনাফে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৫-৬ লক্ষ রোহিঙ্গা। মিলিটারী হামলার পর বানের জলের মত ভেসে আসা এসব রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৭০০ একর বনভুমি ন্যাড়া করেছে। গত ১ মাসে শতাধিক পাহাড় ন্যাড়া করে, গাছপালা কেটে তারা গড়ে তুলেছে হাজারো নতুন বসতি। উজাড় করেছে বনভূমি। ইতোমধ্যে ওই সব স্থানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল বিকেলে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহ’র কাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দক্ষিনের সবগুলো পাহাড়কেটে হাজার খানেক বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা। একইসাথে রাস্তার উত্তরের সামাজিক বনায়নের গাছপালা কেটে পাহাড় সমান করছে একদল রোহিঙ্গা।
এ বিষয়ে সামাজিক বনায়নের অংশীদার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে হেলাল বলেন, স্থানীয় দালাল চক্রের সহযোগীতায় একদল রোহিঙ্গা ১৬ সেপ্টেম্বর সামাজিক বনায়নের পাহাড়টি দখলের চেষ্টা করে। সেসময় আমরা অংশীদাররা বাধা দিলে তারা হামলা করে। এতে আমার ছোট ভাই জমির উদ্দিন আহত হয়। বর্তমানে সে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বালুখালীর বিট অফিসার আব্দুল মান্নান জানান, শফিউল্লাহ কাটার ৩০ একর বনভুমি উজাড় করেছে রোহিঙ্গারা। তাদের বাধা দিলে হামলা করে।
কক্সবাজার বন কর্মকর্তা ( দক্ষিন) আলী কবির বলেন, নয়া রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের ৭ টি সংরক্ষিত বন ধ্বংস করেছে। এরমধ্যে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, বালুখালীর ঢালা, বাঘঘোনা ও তানজিমার ঘোনা এবং টেকনাফের পুটবনিয়া ও কেরণতলীর সংরক্ষিত পাহাড় উজাড় করেছে তারা। তাদের হাতে প্রায় ৭০০ একর বনভূমি ধবংস হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের মংডুর শীলখালী গ্রাম থেকে আসা মো. রফিক (২৭) বলেন, অনেক কষ্টে এই জায়গার খোঁজ পেয়েছেন। পাহাড় ও গাছপালা কেটে সাফ করে একটি ছোট ঘর নির্মাণ করছেন তিনি। ভোরে পাহাড়ের নিচে গিয়ে বাঁশ ও পলিথিন কিনে আনেন। তারপর কোদাল ও দা দিয়ে পাহাড়ের ঢালু সমতল করেছেন। এই ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী ও সাত সন্তানকে নিয়ে থাকবেন। যতদিন মিয়ানমারের পরিস্থিতি শান্ত না হয় ততদিন এখানে থাকতে চান।
অন্যদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে দাবী করেছে পরিবেশবাদীরা। তাদের মতে, রোহিঙ্গারা পরিবেশ সচেতন নয়। এরা কক্সবাজারকে বসবাস অনুপযোগী করে তুলছে।
এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত। তাদের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। এরা যেখানে খাবার খায় তারই পাশে মূত্র ত্যাগ করে। যেখানে ঘুমায় সেখানেই ময়লা ফেলে। এরা পাহাড় কেটে, মূত্র ত্যাগ করে, আর্বজনা ফেলে পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে না পারলে নানা অসুখ বিসুখ মহামারী আকার ধারন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা।
এবিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। একারণে ডায়রিয়া সহ অন্যান্য রোগ বালাই মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। তবে এটা রোধে সর্বাত্বক কাজ চলছে। নয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১ লক্ষ ২০ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছ। পাশাপাশি তাদের ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু রোগ বালাই যাতে মহামারী রুপ না নেয় সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সবচেয়ে জরুরী পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবহার। এর জন্য সির্ভিল সার্জনের পক্ষ থেকে সরকারের উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গীদের সরকারের বরাদ্দ দেওয়া দুই হাজার একর জমিতে নিয়ে যাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী ১৪ হাজার শেড নির্মাণে কাজ করছে। কাজ চলছে। এছাড়া এান দেওয়ার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য নলকূপ বসানো হচ্ছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031