নবাগত রোহিঙ্গাদের ত্রাণে ভাগ বসাচ্ছে পুরনোরা বিপন্ন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিয়ে রীতিমতো হরিলুট চলছে। । আছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যও। ত্রাণের গাড়ি পর্যন্ত লুট হয়ে যাচ্ছে আরাকান মেইন সড়ক থেকেই। অর্ধশত ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং হাজারো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেই ঘটছে এসব ঘটনা। প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেয়া হলেও প্রতিদিনই ঘটছে ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা। ত্রাণ লুটে মাঠপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা এতদিন নবাগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার নামে বিভিন্ন কায়দায় ফায়দা লুটেছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আনা গবাদি পশু সহ অন্যান্য সামগ্রী হয় পানির দামে, না হয় আশ্রয় দেয়ার নামে নিজের আওতায় নিয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নামে অর্থও হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন চক্র। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওই সিন্ডিকেটে সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদেরও নাম ভাঙ্গাচ্ছে। ত্রাণ লুটের সামপ্রতিক দুটি ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে বিস্ময়কর তথ্য। গত রোববার আরাকান সড়কের বালুখালী এলাকা থেকে ত্রাণবাহী একটি গাড়ি লুটের চেষ্টা চালায় পালংখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল। বিভিন্ন টেলিভিশনের লাইভ ক্যামেরার সামনে ঘটে এ ঘটনা। স্থানীয় মৃত আব্দুল রশিদ ফকিরের ছেলে জাফর বর্তমানে গা-ঢাকা দিয়েছে। জাফরের সহযোগী হিসেবে ওই সিন্ডিকেটে আছে আকবর আহমদ নামে স্থানীয় এক জামায়াত নেতা। আকবরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। পুলিশ জাফর ও আকবরকে গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। আকবরের ভাই, বাবাকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের ওই সিন্ডিকেটকে আশ্রয় দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজল কাদের ভুট্টো। তবে ভুট্টো সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মানবজমিনকে তিনি বলেছেন, জাফর ইকবাল তাকে মামা বলে ডাকে, তিনিও তাকে ভাগনা বলে আদর করেন। তাদের সম্পর্ক এতটুকুই। রাজনীতির মাঠে তাদের সম্পর্ক ‘দা-কুমড়ার’ বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমি আপনাকে কয়েকটি ঘটনা বলতে চাই। এখানে বিএনপির আধিপত্য বেশি। আমাদের অনেকেই তাদের সমীহ করে চলে। জাফর বিজিবির উপর হামলা করেছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেখানে আমি ১ নম্বর সাক্ষী হিসাবে মামলা দায়ের করেছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ত্রাণ লুট হচ্ছে এটা সত্য। আমরা অসহায়। তারা মিডিয়ার লোকজনকে মারধর করছে। এগুলো টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। আমাদের নয়। এখনো ওই হামলাকারীরা ধরা না পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতা ফজল কাদের। তিনি জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর শ্বশুর বাড়ি ওই এলাকায় হওয়ায় এখানে বিএনপি অনেকটাই শক্তিশালী। ফজল কাদের বিএনপির সভাপতির ওপর বিষয়টি চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও এলাকাবাসী বলছে অন্য কথা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও এ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট পুরোপুরি ‘ভুট্টো সাহেব’ এর কব্জায়। ওই সিন্ডিকেটে তার ছোট ভাই আশিকও রয়েছে। হেলপার নুর (আগে পরিবহনে হেলপারের চাকরি করলেও এখন তিনি লাখপতি), আফসার মিয়ালা প্রকাশ, আলমগীরও রয়েছেন এ সিন্ডিকেটে। উল্লিখিত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কয়েক গাড়ি ত্রাণ নিয়ে বালুখালী এসেছিলেন। সেখানে বণ্টনের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় যুবকদের। মীরু সিন্ডিকেট নামে পরিচিত একটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওই ত্রাণের একটি বড় অংশ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে যায়। কিছু বণ্টনের পর তারা পুরোটাই লুট করে নেয়। অবশ্য মীরু সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিক যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই সিন্ডিকেট যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র তা নিশ্চিত করেছে। অভিযোগ আছে, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা কাশেম, জসিম, মিজান, হেডম্যান আমির হোসেন এবং রফিক মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও আশ্রয় দেয়ার নামে নানা রকম বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, ওই সিন্ডিকেটের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। সমপ্রতি ২৯টি নবাগত রোহিঙ্গা পরিবারের কাছ থেকে ২৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। আমি তাদের মুরব্বিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা অর্থ ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবছারের নাম ভাঙ্গায় এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চেয়ারম্যান তা নাকচ করে দেন। বলেন, আমিও শুনেছি অনেকে আমার নাম ভাঙ্গায়। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, যারা এসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তারা আমার কেউ নয়।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |