মিয়ানমার সেনাবাহিনী দায়ী রোহিঙ্গা সংকট সে দেশের সেনাবাহিনী সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ সংকটের জন্য । তাই শুধু সু চি নয় সেনাবাহিনীকে চাপে ফেলতে হবে।
সোমবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক সংস্থা অ্যাকশন এইড আয়োজিত ‘প্রোটেকশন অ্যান্ড ডিউরেবল সলিউশন বাই গ্লোবাল লিডার ফর রোহিঙ্গা রিফিউজি’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে এসব এ কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এটা একটা জাতিগত সমস্যা। মিয়ানমার বলছে রোহিঙ্গারা বাঙালি। তো সমস্যা কোথায়? তোমরা কি স্বীকার করো তার ১৯৮৭ সালের আগেই এখানে এসেছে।’
মিয়ানমার সেনাপ্রধান যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে সেটা ক্রাইম বলে মনে করেন ড. ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা হত্যায় মিয়ানমারের নাগরিকদের উস্কে দিচ্ছে সে। রোহিঙ্গা ইস্যু হিসেবে নয়, আমাদের উচিত মিয়ানমারের সেনাদের তথ্যচিত্র সংগ্রহ করে তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতেই হবে। তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য। বাংলাদেশ শুধু আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের কোনোদিনই উদ্বাস্তুর আওতায় পুনর্বাসন করা হবে না। কারণ প্রতিটা দেশই আশ্রয়ের পর, কোনো একটা সময় ধৈর্যচ্যুত হয়। আমাদের এখন ভাবতে হবে, যখন রিফিউজি ১০ লাখে আসবে তখন কী হবে?’
রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাগজে-কলমে যে শরণার্থী আছে, তাদের পুনর্বাসন হতে হবে তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রে বা তাদের নিজ দেশে। আর আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী যারা মিয়ানমারের নাগরিক তাদের মিয়ানমারে ফেরত যেতেই হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক একটি সমন্বিত প্রেশার সৃষ্টি করতে হবে।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসাসহ বাংলাদেশের অন্য অনেক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সেগুলো কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উপস্থাপন করতে পারি। এর জন্য আমরা পরামর্শ দিতে পারি, কিন্তু সরকারকেই কাজ করতে হবে।’
গবেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা কোনো সমস্যা নয়। এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সেটা আমাদের মূল সমস্যা। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনাই নেই। ১৯৭৭ সাল থেকে সরকার এ নিয়ে কিছুই করেনি। আমরা কিছুই চাপ সৃষ্টি করতে পারিনি।’
বিআইআইএসএসের সভাপতি মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অনেকদিন ধরেই সে দেশের মানুষকে মগজ ধোলাই করেছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তাদের ‘বাঙালি’ বলে হত্যা করা হচ্ছে। ভারত ও চীনের সহায়তা ছাড়া এই ভয়াবহতা শেষ করা যাবে না। এটি কিন্তু শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সমস্যা নয়, এটা এখন বিশ্ব সংকট।’
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রশান্ত ত্রিপুরা প্রমুখ।