রোহঙ্গিা সংকট: সব শরণার্থীকে আনা হবে বালুখালী, ১০ দিনে তৈরি হবে ১৪ হাজার তাঁবু
একটি মাইক্রোবাস থেকে সামান্য কিছু রুটি-বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছিল। টেকনাফ রোডে ভিড় করে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তুলনায় যা একেবারেই অপ্রতুল। তাই মুহূর্তেই ফুরিয়ে গেল ওই রুটি-বিস্কুট। ত্রাণ দিতে আসা দলটির পরিচয় জানতে ভিড় ঠেলে কাছে যাওয়ার আগেই লেগে গেল হুলস্থূল। বাধ্য হয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালালেন ত্রাণদাতারা। পালানোর সময় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় আহত হলেন মিনারা বেগম। ঘটনাটি গতকাল শনিবার সকালের। ঘটনাস্থল টেকনাফ শহরের বাসস্ট্যান্ডের কাছে আবু সিদ্দিক মার্কেট।
মিনারা এসেছেন মংডুর উদং গ্রাম থেকে। তার গল্পও আর সবার মতো। স্বামী খুন হয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন অনেক দিন। তারপর এ গ্রাম-সে গ্রাম হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন দু’দিন আগে। শাহপরীর দ্বীপ হয়ে এসেছেন টেকনাফে। তারপর থেকে আছেন আবু সিদ্দিক মার্কেটের বারান্দায়। উপোস দেওয়ার কষ্ট সইতে না পেরে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য এমন মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত গুরুতর আহত এ নারীকে স্থানীয়
একটি ওষুধের দোকানের কর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেন।
এমন বিশৃগ্ধখলা ও নৈরাজ্য কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার সর্বত্র। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন আহত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। আবেগের বশবর্তী হয়ে সামান্য খাবার, কাপড়চোপড় নিয়ে যারা টেকনাফে আসছেন, তারা তো আছেনই। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানকেও পরিকল্পনাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে। তবে রহস্যময় ত্রাতাদেরও দেখা মিলছে পথে পথে। বেশ ভালো অঙ্কের টাকা দিতে দেখা যাচ্ছে শ্মশ্রুমণ্ডিত, সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজনদেরও। প্রতিদিনই তাদের দেখা যাচ্ছে শাহপরীর দ্বীপের এই প্রান্তে। চেষ্টা করেও তাদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল এমন একটি দলের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তাদের একজন নিজেকে হাফেজ এনায়েতুর রহমান বলে পরিচয় দিলেন। তিনি জানান, তারা এসেছেন ময়মনসিংহ থেকে। এসেছেন আলেম সমাজের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি দেখতে এবং যতটা সম্ভব নগদ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তার মতে, রোহিঙ্গাদের কার কী প্রয়োজন সেটা তারাই ভালো বুঝবেন এবং সেইমতো কেনাকাটা করে নেবেন। গতকাল সকাল ৭টা থেকে টানা দুই ঘণ্টা তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রেখে দেখা গেছে, তারা কাউকে ৫০০ টাকার নিচে সাহায্য দিচ্ছেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, শুনেছি ত্রাণ বিতরণের নামে জামায়াতে ইসলামীসহ কতিপয় জঙ্গি দল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাদের এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনে বিপদ দেখা দেবে।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, ত্রাণ নিয়ে যেন রাজনীতি না হয়, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক। তিনি বলেন, টেকনাফের বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ বাজার ও শাহপরীর দ্বীপে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষে পাঁচটি কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। রোববার থেকে কেউ চাইলেই যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারবে না।
বিতরণে শৃগ্ধখলা আনার জন্য জেলা প্রশাসন বিশেষ ত্রাণ শাখা চালু করেছে বলে জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন। তিনি বলেন, বিতরণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় কেউ ত্রাণ পাচ্ছে বেশি বেশি। কেউ আবার পাচ্ছেও না। ত্রাণ নিতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা নারী-শিশু মারাত্মক আহতও হয়েছে। বিভিম্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের আগে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা এবং তাদের সহায়তা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিম্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রোহিঙ্গারা। ফলে ত্রাণ বিতরণে এখনও শৃগ্ধখলা ফিরিয়ে আনা যায়নি। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে গত কয়েক দিন ধরে চলছে চরম অরাজকতা। অনেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ওপর জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। ফলে এসব ত্রাণসামগ্রী নিতে গিয়ে চলছে হুড়াহুড়ি-বিশৃগ্ধখলা। এতে অনেকে আহত হচ্ছে। পদদলিত হয়ে দুই শিশুসহ তিনজন মারা গেছে বলে দাবি করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এ অবস্থায় শৃগ্ধখলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন সরাসরি ত্রাণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করে। নিয়ম করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের। অবস্থার উত্তরণে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বালুখালী ক্যাল্ফেপ নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এই সময়ের মধ্যে ১৪ হাজার তাঁবু তৈরি করা হবে ওই ক্যাল্ফেপ। এতে স্থান হবে নতুন-পুরাতন সব রোহিঙ্গার। অবশ্য উখিয়ার কুতুপালং এবং টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাল্ফেপ নিবন্ধিত ৩২ হাজার রোহিঙ্গা আপাতত সেখানেই থাকছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ত্রাণ বিতরণে অনেকে কৌশলে নিয়মনীতি মানছে না। রান্না করা খাবার, পচনশীল খাবার অথবা প্রতীকীভাবে কিছু অংশ বিতরণের কথা বলে তারা সরাসরি ক্যাল্ফেপ চলে যাচ্ছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে মহাসড়কে। এসব ত্রাণ নিতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তিও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ত্রাণ দিতে আসা লোকজনের অভিযোগ, সুষ্ঠুভাবে সব রোহিঙ্গার কাছে ত্রাণ বিতরণে এখনও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠেনি এখানে। উখিয়ায় সড়কের ওপর স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে ত্রাণদাতাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে তাদের ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। এ অবস্থায় যে যেখানে পারছে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। বেশিরভাগই বিতরণ করছে সড়কের ওপর জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে। ফলে কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না, চলছে চরম নৈরাজ্য।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ব্যাপারে প্রতিদিন খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিভিম্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে বালুখালী ক্যাল্ফেপ নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে সেখানে তাঁবুর নির্মাণ কাজও শেষ করতে তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঢাকায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর এবং ত্রাণ বিতরণ গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ রোববার থেকে ১০ দিনের মধ্যে বালুখালী ক্যাল্ফেপ ১৪ হাজার তাঁবু তৈরির কাজ সল্ফপম্ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া ত্রাণসামগ্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পরিবহন করে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করবে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ কাজ চালিয়ে যাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কোনো ব্যক্তি, সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করতে চাইলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে করতে হবে।
শনিবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বালুখালীতে স্থাপিত নতুন ক্যাল্ফপকে ২০ ্ব্নকে ভাগ করা হবে। আপাতত বরাদ্দ ২ হাজার একর ভূমিতে তাঁবু তৈরি করে সেখানে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা করে দেওয়া হবে। প্রতিটি তাঁবুতে ৬টি রোহিঙ্গা পরিবার থাকতে পারবে। সেখানে সব রোহিঙ্গার স্থান সংকুলান না হলে আরও জমি বরাদ্দ করা হবে। বালুখালীতে ৫ হাজার ২০০ একর জমি রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু ও গতিশীল করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিদিন ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কাজ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সল্ফপম্ন হচ্ছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সল্ফপন্ন করার জন্য আজ রোববার থেকে ১২টি কেন্দ্র চালু হবে। সেখান থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বালুখালী ক্যাম্পে তাঁবু তৈরির কাজ শুরু না হলেও সেখানে প্রায় দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ইউএনএইচসিআর ও আইওএম ইতিমধ্যে ৮০টি শেড তৈরি করে সেখানে কিছু রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা করেছে। বাকি রোহিঙ্গারা স্বউদ্যোগে বাঁশ-পলিথিন দিয়ে বস্তিঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে।
এদিকে, উখিয়া ও টেকনাফে ছয়টি কেন্দ্রে রোহিঙ্গা নিবন্ধন অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে নিবন্ধন করছে।
মিনারা এসেছেন মংডুর উদং গ্রাম থেকে। তার গল্পও আর সবার মতো। স্বামী খুন হয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন অনেক দিন। তারপর এ গ্রাম-সে গ্রাম হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন দু’দিন আগে। শাহপরীর দ্বীপ হয়ে এসেছেন টেকনাফে। তারপর থেকে আছেন আবু সিদ্দিক মার্কেটের বারান্দায়। উপোস দেওয়ার কষ্ট সইতে না পেরে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য এমন মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত গুরুতর আহত এ নারীকে স্থানীয়
একটি ওষুধের দোকানের কর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেন।
এমন বিশৃগ্ধখলা ও নৈরাজ্য কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার সর্বত্র। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন আহত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। আবেগের বশবর্তী হয়ে সামান্য খাবার, কাপড়চোপড় নিয়ে যারা টেকনাফে আসছেন, তারা তো আছেনই। অনেক বড় প্রতিষ্ঠানকেও পরিকল্পনাহীনভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে। তবে রহস্যময় ত্রাতাদেরও দেখা মিলছে পথে পথে। বেশ ভালো অঙ্কের টাকা দিতে দেখা যাচ্ছে শ্মশ্রুমণ্ডিত, সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজনদেরও। প্রতিদিনই তাদের দেখা যাচ্ছে শাহপরীর দ্বীপের এই প্রান্তে। চেষ্টা করেও তাদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল এমন একটি দলের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তাদের একজন নিজেকে হাফেজ এনায়েতুর রহমান বলে পরিচয় দিলেন। তিনি জানান, তারা এসেছেন ময়মনসিংহ থেকে। এসেছেন আলেম সমাজের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি দেখতে এবং যতটা সম্ভব নগদ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তার মতে, রোহিঙ্গাদের কার কী প্রয়োজন সেটা তারাই ভালো বুঝবেন এবং সেইমতো কেনাকাটা করে নেবেন। গতকাল সকাল ৭টা থেকে টানা দুই ঘণ্টা তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রেখে দেখা গেছে, তারা কাউকে ৫০০ টাকার নিচে সাহায্য দিচ্ছেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, শুনেছি ত্রাণ বিতরণের নামে জামায়াতে ইসলামীসহ কতিপয় জঙ্গি দল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাদের এখনই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনে বিপদ দেখা দেবে।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, ত্রাণ নিয়ে যেন রাজনীতি না হয়, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক। তিনি বলেন, টেকনাফের বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ বাজার ও শাহপরীর দ্বীপে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষে পাঁচটি কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। রোববার থেকে কেউ চাইলেই যত্রতত্র ত্রাণ বিতরণের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারবে না।
বিতরণে শৃগ্ধখলা আনার জন্য জেলা প্রশাসন বিশেষ ত্রাণ শাখা চালু করেছে বলে জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন। তিনি বলেন, বিতরণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় কেউ ত্রাণ পাচ্ছে বেশি বেশি। কেউ আবার পাচ্ছেও না। ত্রাণ নিতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা নারী-শিশু মারাত্মক আহতও হয়েছে। বিভিম্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের আগে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা এবং তাদের সহায়তা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিম্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রোহিঙ্গারা। ফলে ত্রাণ বিতরণে এখনও শৃগ্ধখলা ফিরিয়ে আনা যায়নি। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে গত কয়েক দিন ধরে চলছে চরম অরাজকতা। অনেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ওপর জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের দিকে ছুড়ে দিচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। ফলে এসব ত্রাণসামগ্রী নিতে গিয়ে চলছে হুড়াহুড়ি-বিশৃগ্ধখলা। এতে অনেকে আহত হচ্ছে। পদদলিত হয়ে দুই শিশুসহ তিনজন মারা গেছে বলে দাবি করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এ অবস্থায় শৃগ্ধখলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন সরাসরি ত্রাণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করে। নিয়ম করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের। অবস্থার উত্তরণে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বালুখালী ক্যাল্ফেপ নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এই সময়ের মধ্যে ১৪ হাজার তাঁবু তৈরি করা হবে ওই ক্যাল্ফেপ। এতে স্থান হবে নতুন-পুরাতন সব রোহিঙ্গার। অবশ্য উখিয়ার কুতুপালং এবং টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাল্ফেপ নিবন্ধিত ৩২ হাজার রোহিঙ্গা আপাতত সেখানেই থাকছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ত্রাণ বিতরণে অনেকে কৌশলে নিয়মনীতি মানছে না। রান্না করা খাবার, পচনশীল খাবার অথবা প্রতীকীভাবে কিছু অংশ বিতরণের কথা বলে তারা সরাসরি ক্যাল্ফেপ চলে যাচ্ছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে মহাসড়কে। এসব ত্রাণ নিতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোগান্তিও বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ত্রাণ দিতে আসা লোকজনের অভিযোগ, সুষ্ঠুভাবে সব রোহিঙ্গার কাছে ত্রাণ বিতরণে এখনও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠেনি এখানে। উখিয়ায় সড়কের ওপর স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে ত্রাণদাতাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে তাদের ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। এ অবস্থায় যে যেখানে পারছে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। বেশিরভাগই বিতরণ করছে সড়কের ওপর জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে। ফলে কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না, চলছে চরম নৈরাজ্য।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ব্যাপারে প্রতিদিন খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিভিম্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আগামী ১০ দিনের মধ্যে বালুখালী ক্যাল্ফেপ নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে সেখানে তাঁবুর নির্মাণ কাজও শেষ করতে তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঢাকায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর এবং ত্রাণ বিতরণ গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ রোববার থেকে ১০ দিনের মধ্যে বালুখালী ক্যাল্ফেপ ১৪ হাজার তাঁবু তৈরির কাজ সল্ফপম্ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া ত্রাণসামগ্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পরিবহন করে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করবে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ কাজ চালিয়ে যাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কোনো ব্যক্তি, সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করতে চাইলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে করতে হবে।
শনিবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বালুখালীতে স্থাপিত নতুন ক্যাল্ফপকে ২০ ্ব্নকে ভাগ করা হবে। আপাতত বরাদ্দ ২ হাজার একর ভূমিতে তাঁবু তৈরি করে সেখানে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা করে দেওয়া হবে। প্রতিটি তাঁবুতে ৬টি রোহিঙ্গা পরিবার থাকতে পারবে। সেখানে সব রোহিঙ্গার স্থান সংকুলান না হলে আরও জমি বরাদ্দ করা হবে। বালুখালীতে ৫ হাজার ২০০ একর জমি রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু ও গতিশীল করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিদিন ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কাজ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সল্ফপম্ন হচ্ছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সল্ফপন্ন করার জন্য আজ রোববার থেকে ১২টি কেন্দ্র চালু হবে। সেখান থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বালুখালী ক্যাম্পে তাঁবু তৈরির কাজ শুরু না হলেও সেখানে প্রায় দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ইউএনএইচসিআর ও আইওএম ইতিমধ্যে ৮০টি শেড তৈরি করে সেখানে কিছু রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা করেছে। বাকি রোহিঙ্গারা স্বউদ্যোগে বাঁশ-পলিথিন দিয়ে বস্তিঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে।
এদিকে, উখিয়া ও টেকনাফে ছয়টি কেন্দ্রে রোহিঙ্গা নিবন্ধন অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে নিবন্ধন করছে।