দেশে ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত চলছে অভিযান। বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে মামলা করা হয়। কিন্তু নানা কারণে এসব মামলা থেকে খালাস পেয়ে যায় আসামিরা। খালাস পেয়ে আবারো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এতে করে বন্ধ হচ্ছে না মাদকের বিস্তার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে প্রায় অর্ধেক মামলাতেই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যাচ্ছেনা। ফলে অভিযোগ থেকে খালাস পাচ্ছে আসামিরা। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাদক মামলায় এজাহারে ত্রুটি, দুর্বল চার্জশিট (অভিযোগপত্র), সংশ্লিষ্ট মামলায় সাক্ষীদের আদালতে না আসা, মামলার বিচারে বিলম্বসহ বিভিন্ন কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনেক মামলাতেই আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। এ ছাড়া মামলা পরিচালনার জন্য অধিদপ্তরের নিজস্ব আইনজীবী না থাকায় মামলা পরিচালনা করতে বেগ পেতে হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে ৩২ হাজার ৪৪টি মামলায় ৩৪ হাজার ৩৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৭২৩ মামলায় ১২ হাজার ৫৯০ জন, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫৪৮ মামলায় ১১ হাজার ৩০০ জন, ২০১৬ সালে ৯ হাজার ৭৭৩টি মামলায় ১০ হাজার ৪৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৪৩৩টি মামলায় ২ হাজার ৬৩০ জনকে আসামি করা হয়। সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ৪৭৭টি মামলায় ৩৬ হাজার ৯৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মাদকদ্রব্য বিস্তারের পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি তথা পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযান এবং মামলার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়ের করা ৪৬ হাজার ২১৪টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে নিষ্পন্ন ১ হাজার ১২৭ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ১ হাজার ২১৮ জন একই সঙ্গে ৯৩৯ মামলায় খালাস পেয়েছেন ১০৫৭ জন। ২০১৪ সালে ১ হাজার ৭১৬ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৭৫ জন একই সঙ্গে ৯৭৩ মামলায় খালাস পেয়েছেন ১ হাজার ১১২ জন। ২০১৫ সালে ৮৯২ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ৯৭১ জন আর ৯৮১ মামলায় খালাস পেয়েছেন ১০৪২ জন। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৩৫৬ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯২৭ আসামি। একই সঙ্গে ২ হাজার ৯২৭ মামলায় খালাস পেয়েছেন ৪ হাজার ২০৬ জন আসামি।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০১৭ উপলক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রকাশিত এক প্রকাশনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে সাজাপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা শতকরা ৫২ শতাংশ ও খালাসের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে সাজা হয়েছে ৫৬ শতাংশ আসামির, খালাস পেয়েছে ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ১৪ হাজার ৮১৫টি মোবাইল কোর্টের অভিযানের ৭ হাজার ৯৪৮ মামলায় ৮ হাজার ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩১৮ আসামিকে সাজা দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে ১৪ হাজার ৯৩৭টি অভিযানে ৭ হাজার ৪৮৭ মামলায় ৭ হাজার ৮২৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে ৭ হাজার ৮২১ জনকে সাজা দেয়া হয়, ২০১৬ সালে ১৩ হাজার ৫৪১ অভিযানে ৬ হাজার ৪৩০ মামলায় ৬ হাজার ৫৯২ জনকে গ্রেপ্তার করে ৬৫৯১ আসামিকে সাজা দেয়া হয়েছে প্রকাশনা থেকে জানা গেছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আটক করা হয়। ২০১৪ সালে ৩৩ হাজার ৭৫১ বোতল ফেনসিডিল, সাড়ে নয় কেজি হেরোইন, ১০ হাজার ৯৫৭ বোতল বিদেশি মদ, ৪ হাজার ৫৫১ কেজি গাঁজা, ৩৮৯টি গাঁজার গাছ, ৯ হাজার ৩০১ ইনজেকটিং ড্রাগ (অ্যাম্পুল) ও ৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৪৩ পিস ইয়াবা। ২০১৫ সালে পাঁচ কেজি কোকেন, ৩০ হাজার ৮১৮ বোতল ফেনসিডিল, ১১ কেজি হেরোইন, ৮ হাজার ১৩ বোতল বিদেশি মদ, ৪ হাজার ৪৫৫ কেজি গাঁজা, ৪৭টি গাঁজার গাছ, ৩৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮০ পিস ইয়াবা। ২০১৬ সালে ২৪ হাজার ৪৮৩ বোতল ফেনসিডিল, ৮ কেজি হেরোইন, ৪ হাজার ৮৩৭ বোতল বিদেশি মদ, ৩ হাজার ৩৫০ কেজি গাঁজা, ৬৬৩টি গাঁজার গাছ, ১২ হাজার ৩৩১ ইনজেকটিং ড্রাগ (অ্যাম্পুল), ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার মানবজমিনকে বলেন, মাদক মামলায় এজাহার ও অভিযোগপত্রে ফাঁক-ফোকর থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। এ ছাড়া মামলা পরিচালনার জন্য অধিদপ্তরের নিজস্ব কোন আইনজীবী নেই। আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031