পুলিশ ভারতের রাজস্থানে এক মুসলমান দুধ ব্যবসায়ীকে গণপিটুনিতে মেরে ফেলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছয়জন গোরক্ষককে ছেড়ে দিয়েছে।
পেহলু খান নামের ওই দুধ ব্যবসায়ী গত এপ্রিল মাসে রাজস্থান থেকে গরু কিনে হরিয়ানায় বাড়িতে ফেরার পথে আক্রান্ত হন। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে তিনি যে ছয় জনের নাম জানিয়েছিলেন, পুলিশ তদন্তে নেমে দেখেছে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে ছিলই না। এই ছয় জনের মধ্যে তিনজন হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
এদিকে পুলিশ অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার পরে নিহত পেহলুর পরিবার এখন আদালতে যাওয়ার চিন্তা করছে। এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্কও।
রাজস্থানের আলোয়ার জেলার পুলিশ বলছে গত এপ্রিল মাসে পেহলু খানকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় তারা জেলা পর্যায়ে তদন্তের পরে ক্রাইম ব্রাঞ্চকে দিয়েও তদন্ত করিয়েছে। সেই তদন্তের শেষে গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনের সঙ্গে আরও দুজনের নাম যুক্ত হয়েছে। কিন্তু অন্য ছয়জন যাদের নামে অভিযোগ ছিল, তাদের এই ঘটনায় যোগ পাওয়া যায় নি। তারা নাকি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। চার কিলোমিটার দূরের একটি গোশালায় ছিলেন, এমনটাই তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আলোয়ারের পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট রাহুল প্রকাশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, জেলা পর্যায়ের তদন্তের পরে সিআইডি-ক্রাইম ব্রাঞ্চ ওই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল। সেই প্রমাণ যোগাড় শেষ হয়েছে। যে সাতজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার হয়ে আছেন, তারা ছাড়া আরও দুজনের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু ছয়জন অভিযুক্ত ওই গণপিটুনিতে যুক্ত ছিলেন না, সেই প্রমাণও এসেছে আমাদের হাতে।
পুলিশের পক্ষে যদিও বলা হচ্ছে যে ওই ছয়জন ঘটনাস্থলে ছিলেন না, কিন্তু পেহলু হাসপাতালে মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতে নির্দিষ্টভাবে এদের নাম জানিয়েছিলেন। তার পুত্র যাকেও মারা হয়েছিল, সেও ওই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছে।
মৃত দুধ ব্যবসায়ী পেহেলু খানের ছেলে ইরশাদ খান বলেন, বাবা তো দুইদিন হাসপাতালে বেঁচে ছিলেন, এক ইন্সপেক্টর এসেছিলেন বয়ান রেকর্ড করতে। তাকে স্পষ্ট করে এই ছয়জনের নাম বলেছিলেন বাবা। সেটাই ছিল তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি। তারপরেও তারা ছাড়া পেয়ে গেল। আমরা এখন সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব। সেখানে আশা করি ন্যায়বিচার পাব।
নিহতের পরিবার মনে করছে, এই ছয়জনের মধ্যে তিনজন হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেজন্যই রাজ্যের বিজেপি সরকার এদের ছেড়ে দিয়েছে। তবে এই তত্ত্ব মানতে রাজী নন রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাব চাঁদ কাটারিয়া।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে প্রথম অভিযোগে অনেকের নামই লেখা থাকতে পারে। তার ভিত্তিতেই তদন্ত হয়। তখন এমনটা হতেই পারে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া গেল না। সেই অনুযায়ীই আদালতে মামলা চলে। সেই রায় তো সবাইকেই মানতে হবে। তবে এটাও ঠিক যেভাবে ওই ব্যক্তিকে, সে সম্ভবত গরু চোর ছিল তাকে মারা হয়েছিল, তা অনুচিত। চোর হলেও তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই।’
এদিকে মূল অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া ঘটনা রাজনৈতিক এবং সামাজিক আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। অভিযোগ উঠছে যে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।