জ্বলজ্বল করা চোখ দুটো কোন কিছুই দেখছিলোনা।  আখিরা ধর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যে তৈরি অস্থায়ী শিবিরগুলোর একটির এক কোণায় পাথুরে নিস্তব্ধতা নিয়ে বসে ছিলেন।শিবিরে নতুন করে শরণার্থী ঢুকছে প্রতিদিন- নতুন আশা আর নিপীড়নের দাগ নিয়ে। চারিদিকে ছোটাছোটি। এসবের কোন কিছুই তাকে ¯পর্শ করছেনা। কয়েকদিন আগের ভয়াবহতায় যে মানসিক আঘাত তিনি পেয়েছেন, তা অনেকটা অবশ করে দিয়েছে তাকে। আখিরার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে তার চোখের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মুখোশধারী সশস্ত্র মানুষরা চাপাতি দিয়ে তাদের শিরñেদ করেছে। লুট করে নিয়ে গেছে সব। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়াতেও কোন পার্থক্য ঘটেনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন আর নিপীড়ন সাম্প্রদায়িক গ-ির মধ্যে আবদ্ধ নেই। হিন্দু নারীদেরও ধর্ষণ করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রাম। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিয়ের পর থেকে ফকিরা বাজার গ্রামে বসবাস আখিরার। এক বছরেরও কম তার বিয়ের বয়স। মুখোশধারীরা একজনকেও ছাড়েনি। তাকে যেই রক্ত, জমাট বাঁধা রক্ত আর নৃশংসতা দেখতে হয়েছে তা তাকে অবশ করে দিয়েছে। কাওকে উদ্দেশ্য না করে তিনি ফিসফিস করে বললেন, ‘হাডি ফেলায়’( তারা মেরে ফেলে)। আখিরা মনে করতে পারেননা, চার মাসের গর্ভবতী হয়েও তিনি কিভাবে এই পাহাড়ি রাস্তা, শ্বাপদসঙ্কুল জঙ্গল ও পানি পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু তিনি সবশেষে চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি হিন্দুপাড়া মেরজিঞ্জাতে পৌঁছান।
আখিরার মতন হিন্দুপাড়ার আরেক শরণার্থী রিখা ধর। তিনিও মিয়ানমারের পরিস্থিতির কথা সুষ্ঠুভাবে বর্ণনা করতে পারেন নি। মিয়ানমারের ফকিরা বাজারের এক স্বর্ণের দোকান ছিলো তার স্বামীর। মুখোশধারি ব্যক্তিরা এসে তার ওপর অমানবিক অত্যাচার চালায়। শেষমেষ সন্তানদের বাঁচাতে তিনি বলে দেন, কোথায় রেখেছেন তার গহনাগুলো। এর পরেই তার গলা কেটে দেওয়া হয়। রিখা কেঁপে কেঁপে বলেন, ‘তারা আমাদের সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দিলে আমার স্বামী তাদেরকে গহনার কথা বলে দেন। তারা তাকে চোখ বেঁধে পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। আমরা যখন পালিয়ে আসছিলাম, তখন আরও শত শত দেহের সঙ্গে তার রক্তে ভেজা দেহটিও দেখতে পেয়েছি।’ বিজয় রাম নামের একজন বলেন, ‘ওই অস্ত্রধারীরা এক বৃহ¯পতিবার বিকেলের দিকে এসে হাজির হয়। আমাদেরকে আমাদের বাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কাওকে তাদের ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। সপ্তম দিনের মাথায় তারা অন্য একটি গ্রামের উদ্দেশ্যে চলে গেলে আমরা পালিয়ে আসি। বিজয় রাম ও আরও ১২০টি হিন্দু পরিবার অতি রোয়াহ গ্রাম থেকে এক সঙ্গে পালিয়ে আসে। পথিমধ্যে তারা আখিরা, রিখা ও সন্তানসহ আরও ৬ নারীকে খুঁজে পায়।
হালাইদা পালাং পরিষদের এক সদস্য সপন শর্মা রনি নামের একজন বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে আমরা কোন হিন্দু শরণার্থীকে বাংলাদেশে আসতে দেখেনি। দেখা যাচ্ছে, এইবার কোন রোহিঙ্গাই বাদ পড়ছেনা।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031