মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে যে আগুন দেয়া হচ্ছে তা দেশটির সেনাবাহিনীই দিচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এমন সংঘবদ্ধ দলগুলো একসাথে মিলে এই জ্বালাও পোড়াও চালাচ্ছে। তারা যে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে তার অনেক প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলার পর রোহিঙ্গা দমনে সেনা ও পুলিশের অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, জুলুম, নিপীড়ন, ঘর বাড়িতে আগুন, গণহারে মানুষ হত্যা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা, যা এখনো অব্যাহত আছে।
নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত চার লাখের মতো মানুষ পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। হাজারো মানুষের এই স্রোত এখনো অব্যাহত রয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, রাখাইনে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। সেই সাথে স্থানীয় অন্যদের সহযোগিতায় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জ্বালিয়ে দেওয়া এসব গ্রাম থেকে ওঠা ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাংলাদেশ সীমান্ত থেকেও দেখা গেছে। অথচ সরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে। এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে তারা কিছু ছবিও দিয়েছে।
কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে পরিকল্পিতভাবেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে তার অনেক প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
স্যাটেলাইট থেকে তোলা রাখাইন রাজ্যের অনেক ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি বলছে, সেখানে গত তিন সপ্তাহে আশিটিরও বেশি স্থানে বিশাল এলাকা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো এই কাজ করছে বলে অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইনে মিয়ানমার সরকারের পোড়ামাটি নীতির ওপর সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা পড়লে বেশ বিচলিত হতে হয়। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি, স্যাটেলাইটে আগুন সনাক্ত করতে পারে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ওই অঞ্চল থেকে পাওয়া ছবি ও মানুষের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি দেখতে পেয়েছে যে, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মোট ৮০টি জায়গায় ব্যাপক মাত্রায় আগুন দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে এবং পলায়নপর মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।
অ্যামনেস্টির একজন কর্মকর্তা তারানা হাসান বলছেন, তার ভাষায়, এটা পরিষ্কার যে সুপরিকল্পিতভাবে এসব সহিংসতা চালানো হচ্ছে। প্রমাণ হিসেবে অ্যামনেস্টি বলছে, যেসব জায়গায় আগুন দেয়া হয়েছে সেই জায়গাগুলোর আগের চার বছরের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে তারা কোন অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখতে পাননি। বেছে বেছে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতেই আগুন দেয়া হয়েছে। যেসব গ্রামে রোহিঙ্গা এবং রাখাইনরা পাশাপাশি বাস করে, সেখানে রাখাইন বাড়িগুলো আগুনের হাত থেকে বেঁচে গেছে বলে অ্যামনেস্টি এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।