প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিলেও রক্ষা নেই। রেহিঙ্গাদের জন্য হিসাব এখন অনেকটা এ রকম—মাতৃভূমি মিয়ানমারে থাকলে সেনাবাহিনীর গুলিতে মরতে হবে।  বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পার হওয়ার সময় স্থলমাইন আতঙ্ক আর রাতে নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে ঢুকতে চাইলে নৌকাডুবির আশঙ্কা। মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে নৌকায় করে টেকনাফে ঢোকার সময় গতকাল  বৃহস্পপতি বার পর্যন্ত ১৭  দিনে মারা গেছে ১শ ৭  রোহিঙ্গা।

সর্বেশষ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ার সাগরে রোহিঙ্গা বোঝাই এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।। এর কয়েক ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার রাত ১০টায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় ডুবেছে রোহিঙ্গাদের আরেকটি নৌকা। ঢেউয়ের সঙ্গে নাফ নদীর তীরে গতকাল ভেসে এসেছে ৯ রোহিঙ্গার লাশ। এ নিয়ে গত ২৯ আগস্ট থেকে গতকাল (১৪  সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত নাফ নদী এবং সাগরে রোহিঙ্গাবাহী ২৩ টি নৌকা ডুবেছে। এসব ঘটনায় মারা যাওয়া ১০৫ জনের মধ্যে শিশু ৫৪টি। অন্যদের মধ্যে ২৯ জন নারী এবং ২২ জন পুরুষ। এ ছাড়া ২ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে মাইন বিস্ফোরণে অন্তত ছয় রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।

গতকাল সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া, মগপাড়া (চৌধুরীপাড়া) এবং টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়া এলাকায় নাফ নদী থেকে এক রোহিঙ্গা শিশু, চার নারী ও চারজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন। নিহত দুই নারীর গলায়, হাতে ও কানে ৯ ভরি ১ আনা ওজনের সোনার গয়না ছিল। এক নারীর কোমরে থাকা ছোট একটি ব্যাগে মিয়ানমারের মুদ্রায় দুই লাখ দুই হাজার কিয়াত পওয়া গেছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১৪ হাজার ৪২৯ টাকা। (টেকনাফে ১ টাকায় মিয়ানমারের ১৪ কিয়াত পাওয়া যায়। তবে এই লেনদেন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় করা হয় না)

নৌকাডুবির পর সাঁতরে শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার কূলে উঠে আসা রোহিঙ্গা আরেফা বেগম গতকাল বেলা তিনটায়  বলেন, মঙ্গলবার রাতে নাফ নদীর জালিয়াপাড়া তীর থেকে কিছুটা দূরে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে তাঁদের নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকায় তাঁরা ১৮ জন ছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্য ছিল পাঁচজন। স্বামী আলী হোসেন ও তিনি কোনো রকমে কূলে উঠে আসতে পারলেও তাঁদের তিন ছেলে-মেয়ে নিখোঁজ ছিল। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতেই এক ছেলেকে পাওয়া যায়। তাঁর শিশুসন্তান খায়রুল হাসান ও কিশোরী মেয়ে ফরিদা নিখোঁজ রয়েছে। গতকাল থেকে নদীর তীরে দুই ছেলেমেয়েকে খুঁজছিলেন তিনি।

সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপির সদস্য ফজলুল হক বলেন, ছোট্ট নৌকার ধারণক্ষমতার ছিল সর্বোচ্চ ১০জনের। বেশি লোক ওঠায় প্রবল ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে গেছে।

কিছু অসাধু মাঝি টাকার লোভে চুক্তিতে ছোট ছোট নৌকায় রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে জানান সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন। তিনি বলেন, এসব নৌকা নদীতে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়।

মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে গতকাল বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ১১ রোহিঙ্গার লাশ নাফ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান। তিনি , দুই নারীর লাশের সঙ্গে উদ্ধার করা সোনার গয়না ও মিয়ানমারের মুদ্রা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ১১টি লাশই দাফন করা হয়েছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031