সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তুমুল আলোচনা চলছে বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ব্যাপারে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, কেউ আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন।

ফেসবুকে লেখা স্ট্যাটাসে নাজমুল আহসান রাসেল নামের এক ব্যক্তি বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। অনেক হিন্দু ও বৌদ্ধ পরিবার বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মিয়ানমার বলছে এঁরা সবাই বাঙালি। আর আমরা বলছি এঁরা সবাই মানুষ।’

গত ২৫ আগস্ট হারাকাহ-আল-ইয়াকিন নামের একটি রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায়। হারাকাহ-আল-ইয়াকিন ইংরেজিতে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামে। মিয়ানমারের সরকারি সূত্র বলছে, ওই হামলায় ১০ পুলিশ কর্মকর্তা, ১ জন সেনা ও ১ জন অভিবাসী কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে নিহত হয়েছেন ৭৭ জন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’। একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে মন্তব্য করে সোহেল তারেক লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যে জেনোসাইড চলছে, সেটা খুব পরিকল্পিত। আর এ কারণেই এ ব্যাপারে দুনিয়ার সব পরাশক্তি এক কাতারে অবস্থান নিয়েছে। অন্য অনেক বিষয়ে তাদের মতভিন্নতা থাকলেও জেনোসাইডের বিষয়ে তারা একমত। এর পেছনে প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে, দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ও ক্ষমতার ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সারওয়ার তুষার। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নাকি “স্মরণকালের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক” বিরাজ করছে। বাংলাদেশ যখন রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপে পর্যুদস্ত, তখন ভারতের ভূমিকা কী?”

গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালাচ্ছে। এটি বন্ধ করার জন্য মিয়ানমারের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে রোহিঙ্গা সংকটে থাকা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

ত্রিশঙ্কু মল্লিক নামের এক ব্যক্তি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই সংকট ধর্মীয় সংকট নয়। মুসলিম-বৌদ্ধের মধ্যকার সংকট নয় মোটেই। এটি নৃ-জাতিতাত্ত্বিক সংকট। একটা প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এটি বৌদ্ধ-মুসলিম দ্বন্দ্ব। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস।’

অন্যদিকে খান আসাদুজ্জামান মাসুম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ওপর জোর দেন। তিনি লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।’

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031