কক্সবাজার ছেড়ে গোপনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাখাইনে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা। বনের কাঠ-বাঁশ কেটে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। অনেকে আগে থেকে আসা আতœীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এমন খবর আসছে। তবে এ সম্পর্কে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। যদিও চট্টগ্রাম জেলার উপজেলাসমূহে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কঠোর সতর্কতা আরোপ করেছে পুলিশ প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা এবং মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, গত ২৪শে আগষ্টে রাখাইনে পুলিশ চেকপোষ্টে হামলার আগে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশমুখী ঠিক তখনই চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তাঁদের অনুপ্রবেশ নিয়ে কঠোর সতর্ককতা আরোপ করা হয়। এমনকি চট্টগ্রাম মহানগরীর শাহ আমানত সেতু, কালুরঘাট সেতুসহ নৌ-পথে চেকপোষ্ট বসানো হয়। ফলে রোহিঙ্গারা সড়ক ও নদীপথে আসতে পারছে না। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্যও আমাদের নেই। তবে পাহাড়ি পথে ছড়িয়ে পড়ার সন্দেহ রয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ প্রশাসন। স্থানীয় লোকজন জানান, গত সপ্তাহ থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ি পথে পায়ে হেঁটে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের রাউজান, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, পটিয়া ও পাশ্ববর্তি রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই এবং কাউখালি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা সমূহে শত শত রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। কাউখালী উপজেলার মনাইপাড়া, গোদারপাড়, ডাক্তারছোলা, ডাইলংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নাকাটা, তলতলা, দোচালা, ডিলাইট, চিকনছড়া, কচুপাড়া এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসতি গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর, ওয়াহেদ্যাখীল, বৃকবানুপুর, বানারস, জানিপাথর, গলাচিপা, হলদিয়া রাবার বাগান, এয়াসিন নগর জাইল্যা টিল্যা, আফজইল্যার টিলা, ডাবুয়া ইউনিয়নের মেলুয়া, রাধামাধবপুর, ডাবুয়া রাবার বাগান, হিংগলা, মেলুয়া, রাউজান পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাউজান রাবার বাগান, পূর্ব রাউজান কাজী পাড়া, পুর্ব রাউজান, ঢালার মুখ, দাওয়াত খোলা, হরিনকাটা, পাউন্ন্যা, ৭ নম্বর রাউজান ইউনিয়নের পুর্ব রাউজান, মুখছড়ি, ভোমর ঢালা, কদলপুর ইউনিয়নের শমশের পাড়া, ভোমর পাড়া, কমলার টিলা, ইসলামীয়া নতুনপাড়া. জয়নগর বড়–য়াপাড়া ও পাহাড়তলী ইউনিয়নের ঊনসত্তরপাড়া পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়েছে রোহিঙ্গারা। সবচেয়ে বেশি বসতি গড়ে তুলছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। যেখানে রাখাইনে বিগত সহিংসতায় বসতি গড়ে বসবাস করছে শত শত রোহিঙ্গা পরিবার। যাদের অনেকে ২০০৮ সালে প্রণীত ভোটার তালিকায় ভোটারও হয়েছেন। এ সূত্রে তাদের আতœীয় স্বজনরা এখন আশ্রয় নিচ্ছে সেখানে। এছাড়া উপজেলার কোদালা, নারিশ্চা, হোচনাবাদ, চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ইছাখালি, ইসলামপুর, রাজানগর, পোমরা, বেতাগি ও সরফভাটাসহ হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মিলন পালিত এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার ওয়ার্ডে রোহিঙ্গা নেই। তবে বেতবুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায় কয়েকশত রোহিঙ্গা পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। রাউজানের কয়েকটি ইউনিয়নের গহিন পাহাড়েও রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তোলার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের খাজার টিলার পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গা পরিবারের বৃদ্ধা ছুরা খাতুন জানান, আমার স্বামী আনিস ও পরিবারের সদস্যরা ১০-১২ বছর আগে থেকেই এখানে বসবাস করছে। এলাকার ভোটার তারা। তাই প্রাণ বাঁচাতে নিকট আতœীয় আরও চার পরিবারকে নিয়ে ৩ দিন আগে এখানে এসেছি। এরা বনের কাঠ-বাঁশ আর শন দিয়ে কোনোরকমে ঘর বানিয়ে থাকছে।
পদুয়া ইউনিয়নের দুধপুকুরিয়ার পাহাড়ে একসাথে বসতি গড়েছে ১১টি পরিবার। বনের বাঁশ-কাঠ-শন কাটলেও তারা কেউ পাহাড় কাটেনি। জঙ্গল পরিষ্কার করেই বসবাস করছেন। তবে দিনের বেলায় পুরুষরা কেউ ঘরে থাকে না বলে জানান স্থানীয় লোকজন। এরমধ্যে সাইদুল নামে এক কিশোর বলেন, তার বড় বোন ও মাকে মেরে ফেলেছে সেনারা। বাবার সাথে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী ইউপির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা পরিবার বিচ্ছিন্নভাবে বসতি গড়ে তুলে বসবাস করছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয় জনসাধারণ। বিষয়টি থানায় জানানো সত্ত্বেও নিরব রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, পাহাড়ি এলাকায় রোঙ্গিাদের বসতি গড়ার কথা বলেছেন অনেকে। কিন্তু এর কোনো সত্যতা পায়নি। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সত্যতা পেলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেপায়েত উল্যাহ বলেন, পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা বসতির বিষয়ে জানা নেই আমার। খোঁজ নিয়ে বসতি পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই কথা বলেছেন রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থানার ওসিও।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031