সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতে ১ নারীসহ ৫৭ জনকে অর্থ ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে টেকনাফ । এসব দালাল, ট্রলার মাঝি, মালিককে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় আটক করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশণার (ভুমি) প্রণয় চাকমা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাজাপ্রাপ্তদের কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ দালালকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছেন টেকনাফের হ্নীলা পুরান বাজার এলাকার মংলা রাখাইনের ছেলে লং চে রাখাইন (৪০), হোয়াইক্যং খারাংখালী এলাকার এজাহার হোসনের ছেলে আবুল হাশেম (৩৬), টেকনাফ সদরের মহেষখালীয়া পাড়া এলাকার মকবুল আহাম্মদের ছেলে হোসন আহমদ (৩০), একই এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে কামাল হোসন (২৫), বাহারছড়া শামলাপুর এলাকার হাশেম উল্লাহর ছেলে জিয়াউর রহমান (৩০), একই এলাকার মৃত হাবিব উল্লাহর ছেলে নূর আহমদ (৫০), মকবুল আহাম্মদের ছেলে দিল মোহাম্মদ (২৭), শাহপরীরদ্বীপ ডাঙ্গর পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল আমিনের ছেলে মোঃ এমদাদ (২৮), মৃত আবুল কালামের ছেলে মোঃ ইউনুচ, উখিয়া মনখালী এলাকার নূর আহমদের ছেলে মোঃ আবছার (২৮), একই এলাকার মুফিজুর রহমানের ছেলে রশিদ আহমদ (৩২), মিয়ানমার মংডু চাইন্দাপাড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে আব্দুল আমিন (৩২)।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মাইন উদ্দীন খান জানান, টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ দালালকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া এলাকার আব্বাস মিয়ার ছেলে মোরশেদ আলম (৩৪), নাইট্যং পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মতলবের ছেলে নূরুল হক (৬৫), রহিম উল্লাহ (৫২), হোয়াইক্যং কাঞ্জরপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর (২৩), একই এলাকার মৃত হাকিমের ছেলে মোঃ রুবেল (২২), মাসুকের ছেলে ফেরদৌস (২৩)।
র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনর্চাজ মেজর মোঃ রুহুল আমিন জানান, টেকনাফ থেকে শাপলাপুর এলাকায় কিছু সংখ্যক দুস্কৃতিকারী মায়ানমার হতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে অবরুদ্ধ করে রেখে নির্যাতনের সংবাদে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ৬ জন দালালকে আটক করা হয়। এরা হলেন টেকনাফ বাহারছড়া শাপলাপুর এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে জুবায়ের হেলাল (৩৩), সুলতান আহমদের ছেলে কালা মিয়া (৪৩), মোজাহের মিয়ার ছেলে ছৈয়দ আলম (৪১), বড় ডেইল এলাকার আবুল হোছনের ছেলে জালাল উদ্দিন (৪৪), টেকনাফ সদরের মহেষখালীয়াপাড়া এলাকার ফজল আহমদের ছেলে আবুল কাশেম (৪৫), লেংগুরবিল এলাকার মকবুল আহমদের ছেলে মোস্তাক মিয়া (৪২)।
অপর দিকে সেন্টমাটিনে কোস্টগার্ড ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৪ জন দালাল ও ট্রলার মাঝিকে আটক করেন। আটককৃতরা হলেন টেকনাফের বাহারছড়া হলবনিয়া এলাকার আফলেতুনের ছেলে রৌশন আলী (৫৫), একই এলাকার মিয়া হোসনের ছেলে জয়নাল আবেদিন (২০), শীলখালী এলাকার আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৮),একই এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে সালামত উল্লাহ (৩৭), আবু বক্করের ছেলে নূরে আলম (২৫), দুদু মিয়ার ছেলে শফি উল্লাহ (২৫), তাহেরের ছেলে মোঃ শামসুল আলম (৩৫), জাহাজপুরা এলাকার মোঃ হোসনের ছেলে আবুল হোসন (১৫), টেকনাফ সদরের হাবিরছড়া এলাকার বশির আহমদের ছেলে মোঃ হোসেন (১৯), একই এলাকার জুনাব আলীর ছেলে রবি উল্লাহ ((১৮), হোছন আলীর ছেলে নূরুল আমিন (৩০), মিঠাপানির ছড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে গোলাম হোসেন (৪০), একই এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে সুলাইমান (২৫), সুলতান মিস্ত্রির ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৫), লেঙ্গুরবিল এলাকার ইসমাইলের ছেলে মোঃ হারুন (২৮), নূর আহমদ সিকদারের ছেলে ইসমাইল (২৭), আব্দুর রহিমের ছেলে মোঃ হোসেন (২০), মৃত জমির হোসনের ছেলে মোঃ শুক্কুর (৫২), সাবারাং ফতেআলীাপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে জাকের আলম (২০), কুরাবুইজ্জা পাড়া এলাকার আলী আহমদের ছেলে রহিম উল্লাহ (৩৪), সাবরাং এর কালা মিয়ার ছেলে মোঃ আলম (২০), কক্সবাজার সদরের বাংলাবাজার এলাকার হাকিম আলীর ছেলে মোঃ হানিফ (৫৫), মিয়ানমার মংডু সোয়াংখালী এলাকার উমর মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০)। এদের প্রত্যেককে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে টেকনাফ সীমান্তে ব্যবসায় নেমেছে এলাকার বেশ কিছু প্রভাবশালী চক্র। এ সব চক্র ট্রলার যোগে রোহিঙ্গাদের এনে জিম্মী করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সহায় সম্বল হারানো রোহিঙ্গাদের থেকে টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে জিম্মী করে বিদেশে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সব চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মাথা পিছু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
৮ সেপ্টেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশণার (ভুমি) প্রণয় চাকমা জানান পুলিশ-বিজিসহ দিনভর শাহপরীরদ্বীপ, ডাঙ্গরপাড়া ও কচুবনিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১ নারীসহ আরও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তম্মধ্যে কচুবনিয়া থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ভাইকে ইন্ধন দেয়ার অপরাধে জুহুরা বেগম নামীয় ১ জন মহিলাকে আটক করা হয়। বিশেষ বিবেচনায় তাকে কারাদন্ড না দিয়ে ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অপর ৮ জন প্রত্যেককে ৫ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031