শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে টেকনাফের নাফনদীর শাহপরীরদ্বীপ ও খারাংখালীর পয়েন্টে পৃথক নৌকা ডুবির ঘটনায় । অপরদিকে আহত ও অসুস্থ ৩ রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে শাহপরীরদ্বীপের নাফনদী ও খারাংখালীর পয়েন্ট থেকে এ লাশগুলো উদ্ধার করে কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী ও পুলিশ। এদিকে ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোর রাতে সেন্টমার্টিনদ্বীপের অদুরে বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিনদ্বীপের একটি যাত্রীবাহী সার্ভিস ট্রলার ডুবে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।এতে শতাধিক রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, মিয়নমারে সহিংসতার পর থেকে বঙ্গোপসাগর ও নাফনদী থেকে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেই চলছে। নৌকা ডুবির ঘটনায় বুধবার ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নারী শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গার মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে শাহপরীরদ্বীপ জেটি এলাকা থেকে ৫ শিশু, খারাংখালী পয়েন্ট থেকে অপর এক শিশু, নৌবাহিনী কর্তৃক দরগাহছড়া ঘাট থেকে মা-ছেলের মৃতদেহ পুলিশকে হস্তান্তর এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়া সৈকত এলাকা থেকে নারী শিশুসহ দুই জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাদেরকে দাফন করা হয়েছে।
এছাড়া আহত ও অসুস্থ হয়ে আরো তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটেছে। বুধবার সকালে সদর ইউনিয়নের লম্বরী সৈকত পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে আসা আহত দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটেছে। মৃতদেহগুলো তাদের স্বজনরা লেদা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় দাফনের জন্য নিয়ে যায় বলে জানান সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজান মিয়া।
এদিকে বুধবার সকাল ৬ টার দিকে টেকনাফ বাস ষ্টেশনের আবু ছিদ্দিক মার্কেট চত্বরে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সাথে আসা এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়। সে রাখাইনের মংডু থানার উদং এলাকার অলি আহমদের স্ত্রী গুল সেহের (৭৯)। তিনি মঙ্গলবার ৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের বাস স্টেশনে চলে আসেন।
টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুল হক বলেন, বদর মোকাম এলাকার উপকূলে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকা ডুবির পর অনেকে সাঁতরে তীরে উঠেছেন। ৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সাঁতরে তীরে উঠা কয়েকজন রোহিঙ্গার বরাত দিয়ে ফজলুল হক বলেন, শতাধিক রোহিঙ্গা এখনো নিখোঁজ রয়েছে। মোহনা অতিক্রম করার সময় নৌকা উল্টে যায়। একেকটি নৌকায় ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী ছিল, যা ধারণ ক্ষমতার বেশি।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈনুদ্দিন খান বলেন, ‘স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের ১১টি নৌকাডুবির ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবি ও অসুস্থ হয়ে এ পর্যন্ত ৬০ রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে গত বুধবার ৪ জন, বৃহ¯পতিবার ১৯ জন ও শুক্রবার ২৬ জন রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের সীমান্তের চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার কথা বলে সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছে সেনা ও পুলিশ। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তাদের শত শত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করছে। আর সাগর ও নদী পথে সীমান্তে পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোর রাতে সেন্টমার্টিনদ্বীপের অদুরে বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিনদ্বীপের একটি যাত্রীবাহী সার্ভিস ট্রলার ডুবে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু ছিল। ট্রলার ডুবির ঘটনায় এরা সকলেই নিখোঁজ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী সেন্টমার্টিদ্বীপ স্টেশনের কর্মকর্তা আশ্রাফ জানান সার্ভিস ট্রলারটি রোহিঙ্গা পুশব্যাক করতে মিয়ানমারের নাইক্ষংদিয়ায় গিয়েছিল। ফেরার সময় ডুবে চরে আটকে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করে শাহপরীরদ্বীপে আনা হয়েছে। এ সার্ভিস ট্রলারটির মালিক সেন্টমার্টিনদ্বীপ পশ্চিমপাড়ার মৃত আবুল কালামের পুত্র জাহাঙ্গীর বলে জানা গেছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031