বন্যাদুর্গত এলাকায় দিনাজপুরে ঈদের আমেজ নেই । দুর্গত মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এখন দিশাহারা। চারদিকে বিধ্বস্ত। বন্যায় হারিয়েছেম ঘর-বাড়ি, হারিয়েছে ফসল। কেউবা হারিয়েছে স্বজন। মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। এখন এসব বানভাসি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হৃদয়ে ধুধু শ্মশান। বিশুদ্ধ পানি আর একমুঠো খাবারের কষ্টে যেন যায় যায় তাদের প্রাণ। এ অবস্থায় ঈদুল আজহার আমেজ নেই বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মানুয়ের এবার হচ্ছে না কোনো পশু কোরবানি।
বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বেকাহার মোল্লাপাড়া গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন আজগরের বাড়িতে দেখা গেল তার স্ত্রী ভ্যানের ওপর বসে নামাজ আদায় করছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি তৈরি করতে না পারায় এভাবেই ফাঁকা জায়গায় রয়েছেন তারা। বন্যায় তলিয়ে গেছে তার কষ্টার্জিত ফসল। এনজিওর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে দেড় বিঘা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলেন আহাচান মিয়া। সবই তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এখন চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না তার। ৩ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে ৫ সদস্যের সংসার। এদের পেট ভরে দু’বেলা খেতে দিতে পারেন না। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। কিন্তু ঈদের আনন্দ নাই তার পরিবারে। এ নিয়ে ভাবতেও চান না ষাটোর্ধ্ব বয়সী আহচান। তার ভাবনা পরিবারের সদস্য নিয়ে কিভাবে খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। এ ছাড়া আর কোনো ভাবনা আসে না তার মনে। ঈদ উপলক্ষে কোনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্য জোটেনি তার কপালে। ছোট ছেলে-মেয়েরা ঈদের বায়না করতে চাইলে সজোরে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন ছেলে- মেয়েদের। দুশ্চিন্তায় আর নানা হতাশায় রাতে ঘুমুতে পারেন না তিনি।
শুধু আহচান নয়, একই অবস্থায় আশপাশ গ্রামের অনেক পরিবার। এসব পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার। ঈদ যেন কোনো জানান দিতে পারেনি তাদের মনে। সরজমিনে বিরল উপজেলার আরো কয়েকটি গ্রাম ঘুরে চোখে পড়ে একই চিত্র। সর্বত্রই বেঁচে থাকার লড়াই করে চলেছেন বানভাসিরা। ঈদ আসছে এটুকই জানেন তারা। এর বেশি কোনো অনুভূতি নেই তাদের।
প্রতি বছর ঈদের আনন্দ তাদের ছুঁয়ে গেলেও এবার তা কেড়ে নিয়েছে বন্যায়। বন্যার পানি কমে গেলেও সংগ্রাম থামেনি তাদের। নতুন করে নিজের ঘর তৈরি করছেন অনেকে। ভিটেতে মাটি ভরাট করছেন। ঝুপড়ি বেঁধে থাকছেন। কেউ কেউ পুরনো ঘরে উঠেছেন ঠিকই। কিন্তু অনেক ঘরই নড়বড়ে, জরাজীর্ণ। ভিটামাটি স্যাঁতসেঁতে। খাবার নেই। সবাই বন্যার্ত। সবার একই অবস্থা। নিম্নবিত্তরা কাজের সন্ধানে নানা স্থানে ছুটলেও মধ্যবিত্তরা বেকায়দায়। অন্যান্য বারের মতো এবার কোরবানি দিতে পারছেন না তাদের অনেকেই। গ্রামের পর গ্রামে এবার কোনো কোরবানি হচ্ছে না। দিনাজপুর জেলার প্রায় সাড়ে ৬ লাখ বানভাসি মানুষের মধ্যে বেশির ভাগের একই অবস্থা।
পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ইবরাহিমপুর গ্রামের অছিমন জানান, গরিবের আবার কিসের ঈদ! ঈদতো হইলি বড় লোকের জন্য। হামারতো তামাম শেষ! কি খামো, আর কি করমো, পাছি না দিশকুল! ঈদ আমার জন্যে নাহায় বাহে! ফরকাবাদ ইউনিয়নের ভবানীপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে অন্যান্য বছর প্রায় সবাই কোরবানি দিতো। সেই কোরবানির মাংস দশের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা করে দিতো গ্রাম্য মাতব্বররা। এবার এই গ্রামে তেমন একটা সারা নেই কোরবানি ঈদের।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031