রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে বজলুল হক চুয়াডাঙ্গা থেকে ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন । একটু ভালো দাম পাওয়ার আশায় এত দূর আসা। কিন্তু হাটে্ এসে হতাশ তিনি। যে গরুর দাম তারা বলছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা, সেটা ক্রেতা বলছেন ৮০ হাজার টাকা। আসলে ঈদের আরো তিন বাকি বলে এখনা জমে ওঠেনি পশুর হাট। ক্রেতারা ঘুরে যাচাই করছেন পশুর দাম।
তবে হাটে ভারতীয় গরু আমদানিও দাম কম হওয়ার কারণ বলে দাবি করেন বিক্রেতারা। সীমান্তে কড়াকড়ি থাকার পরও হাটে এত গরু কীভাবে এল বিস্ময় প্রকাশ করেন বজলুল হক। ক্ষোভ নিয়ে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কষ্ট তো সরকার বোঝে না। সারা বছর গরু পালি আমরা, আর ঈদের সময় সীমান্ত খুলে দেওয়া হয় ভারতীয় গরু আসার জন্য।’ গাবতলীর হাট ৫০ শতাংশের বেশি ভারতীয় গরুর দখলে বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর বলেন, ‘এভাবে হাট ভর্তি ভারতীয় গরু থাকলে আমরা তো ন্যায্য দাম পাব না। ভারতীয় গরুর আকারের একটি দেশি গরু পালতে আমাদের খরচ অনেক বেশি হয়।’
পাশেই সাদা রঙের গরু দেখিয়ে বজলুল হক বলেন, ‘দেখুন ওদিকে সব ভারতীয় গরু।’ এভাবে ভারতীয় গরু এলে আমাদের গরু পালন ছেড়ে দিতে হবে।’
সেখানে গিয়ে দেখা যায় ৪০টি ভারতীয় গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুল মোমেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা এ ব্যবসায়ী ঢাকাটাইমসেকে বলেন, ‘আমরা এ গরুগুলো ছয় মাস আগে ভারত থেকে এনেছি। ছয় মাস আমাদের খামারে লালন-পালন করেছি।’ একটি গরু দুই লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। বাকি গরুর দাম দুই লাখ থেকে চার লাখ টাকা।
ভারতীয় গরুর কারণে দেশি গরুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না- দেশি খামারিদের এমন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে হাট কর্তৃপক্ষ। হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমকে বলেন, গরুর হাটে এখন বিশ থেকে ত্রিশ হাজারের বেশি গরু আছে। তবে হাটে যে জায়গা তার ৫০ শতাংশ ভরেছে গরুতে। এর মধ্যে ভারতীয় গরু ৫ শতাংশের বেশি নয় বলে দাবি করেন তিনি। কাল হাটে আরো অনেক গরু আসবে জানান তিনি।
ইজারাদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখনো (মঙ্গলবার বিকেল) পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। যে অল্পসংখ্যক গরু বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর দাম ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে।
হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, মূলত ঈদের দুই দিন আগে গাবতলী হাটে গরু বেচা-কেনা বেশি হয়। বুধবার বেশ ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে নুর মোহাম্মদ এসেছেন গাবতলী হাটে। তিনি কিনেছেন একটি খাসি, যার দাম ৩৭ হাজার। ঢাকাটাইমসকে নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি খাসি কিনতেই হাটে এসেছিলাম। এটার দাম চাওয়া হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। এক মনের মতো ওজন হবে খাসিটার।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে বড় আকারের গরু দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর মাঝারি গরু ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। ছোট গরুর দাম ৪০ থেকে ৭৫ হাজার। খাসির দাম ১০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কুষ্টিয়া থেকে জহরুল ইসলাম ৩৫টি ছাগল নিয়ে এসেছেন গাবতলী হাটে। দুটি ছাগল ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকার ছাগল আছে তার কাছে।
গরুর পেছনে দৌড়াতে দেখা যায় হামিদুর রহমান নামের একজনকে। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন হাটে। লাল রঙের গরুটি কিনেছেন এক লাখ টাকায়। এখন বাসায় নেওয়ার জন্য একজন লোক প্রয়োজন তার।
এবার বিক্রেতারা গরুর দাম বেশি হাঁকছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা। তাদের একজন বলেন, ‘যে গরু আমরা গতবার কিনেছি দেড় লাখ টাকায় এবার তা দেখছি দুই লাখ টাকার ওপরে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। দেখি আরও তো দুই দিন সময় আছে।’
উটের দাম ১৬ লাখ, দুম্বা ছয় লাখ
কোরবানির পশুর হাটে গরু-ছাগলের পাশাপাশি উট ও দুম্বাও উঠেছে। বিক্রেতারা দাবি করছেন এগুলো সৌদি আরব থেকে আনা।
হাটে উট নিয়ে এসেছেন আসাদ। মিরপুর তার বাসা। উটটির দাম সাড়ে ১৬ লাখ টাকা হাঁকেন তিনি। ১০ লাখ টাকা বলছে ক্রেতা। এটি সৌদি আরব থেকে এনেছেন বলে দাবি তার। তবে, অনেকেই ভারত-পাকিস্তান থেকে উট এনে সৌদি বলে চালিয়ে দেন- এমন খবর হয়েছে গণমাধ্যমে।
আসাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি তো ১৬ লাখ টাকাই বিক্রি করতে চাই। কারণ এ হাটে আর উট আসেনি। আমি ২৬ লাখ টাকাও চাইতে পারতাম। তা কিন্তু চাইনি।’ ছয় বছরের এই উটের ওজন ২০ মণ হবে বলে জানান তিনি।
আসাদ দুম্বাও এনেছেন কয়েকটি। তিন লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা দুম্বার দাম। দুম্বার বয়স ৪ বছর।
হাট ঘুরে দেখা গেল ক্রেতারা অনেকেই আজ দাম যাচাই করতে এসেছেন। মূলত গরু কিনবেন ঈদের এক-দিন আগে।
আসলাম হোসেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় গরু রাখার ঝামেলা আছে। তার ওপর একে খাবার খাওয়ানো, ময়লা পরিষ্কার করা, দেখাশোনা করা। আবার যদি বদরাগী গরু হয় তাহলে তো কথাই নেই। রশি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। তাই আমি ঈদের এক দিন আগে গরু কিনব।’ হাটের গরুর দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রচুর গরু এলেও দাম কিন্তু বেশিই মনে হচ্ছে।
তবে হাটে যারা গরু নিয়ে আসছেন, তারা বলছেন, গরুর দাম গতবারের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণ, এবার গরুর খাবারের দাম বেশি ছিল। তার ওপর বন্যার কারণে গরুর খাবারে ব্যয় বেশি হয়েছে। তাই একটু দাম বেশি।
হাটে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পে কথা হলো দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি নেই। এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখান নয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে হাটের ভেতরে ও বাইরে।
স্বপন কুমার জানান, এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য আছেন হাট এলাকায়। সাদা পোশাকেও পুলিশ ঘুরছে।
র্যাবের টহল ক্যম্পে কথা হয় রায়হানের সঙ্গে। তিনি জানান, তারা এখানে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন।
হাটে হাসিলঘরের কাছেই রাখা হয়েছে জাল টাকা শনাক্তের মেশিন। সেখানে দায়িত্বে আছেন মো. শাহিন। তিনি বলেন, এখনো কোনো জাল টাকা পাওয়া যায়নি হাটে।