স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের প্রাসাদটি যেনো কোন রূপকথার গল্প। প্রায় হাজার একর জমির মাঝখানে আয়নায় মোড়া এক প্রাসাদ, তার নাম ‘বাবা কি গুফা’। দামি আসবাব, সোফা, পর্দায় সাজানো বিলাসবহুল সেই প্রাসাদেই থাকতেন ‘ধর্ষক ধর্মগুরু’ রাম রহিম।
গুফায় তার দেখভালের জন্য ছিল ২০০ জনেরও বেশি বাছাই করা শিষ্যা। চুল খোলা, পরনে সাধ্বীদের মতো দুধসাদা রঙের পোশাক এরা রাম রহিমের যত্নআত্তি করতেন। এমনই দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রাম রহিম।
এক সময়ে বাবার গুফায় অতিথি হওয়া বিহারের সাংবাদিক পুষ্পরাজ জানান, সেখানে আছে মেয়েদের স্কুল ‘পরীলোক’। এই স্কুলের সব পড়ুয়াই সুন্দরী। কারণ, রাম রহিম মনে করেন সুন্দরী হলেই মেধাবী হয়। সেই গুফায় প্রবেশাধিকার আছে মাত্র কয়েকজনের। তাও আঙুলের ছাপ, চোখের মণির মতো বায়োমেট্রিক তথ্য মিললে তবেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মেলে।
ধর্মগুরু হলেও রাম রহিমের পছন্দ শিফনের রঙবেরঙের জামা, বাহারি জুতো। তার জামাকাপড় তৈরির জন্য নিজস্ব ফ্যাশন ডিজাইনার রয়েছেন, রয়েছেন নিজস্ব হেয়ার ড্রেসারও।
রাম রহিমের কনভয়ে বিলাসবহুল ১০০টি গাড়ি। তার মধ্যে ১৬টি কালো রঙের ফোর্ড এনডেভার। বাবা প্রাসাদ থেকে বের হলে সব গাড়ি তাঁবু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বাবা নিজেই ঠিক করেন, তিনি কোন গাড়িতে উঠবেন। আশ্রমে নিজের ব্যাটারিচালিত গাড়িতেই ঘোরেন তিনি।
সিরসায় ডেরা সাচা সৌদার এই সদর দপ্তর আসলে নিছক আশ্রম নয়। ছোটখাটো শহর। ডেরার ভিতরেই চাল, ডাল, আনাজের চাষ হয়। হোটেল, সিনেমা হল, স্কুল, রেস্তোরাঁ, মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, স্টুডিও, বায়ো-গ্যাস কারখানা, পেট্রোল পাম্প, সংবাদপত্রের ছাপাখানা সবই রয়েছে। একসঙ্গে ১০ হাজার জামাকাপড় কাচার ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াশিং মেশিনও রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে কন্ট্রোল রুম, গোটা ডেরা জুড়ে নজরদারি ব্যবস্থা।
ডেরার বাইরেও রাম রহিমের দাপট কম নয়। ডেরা সাচা সৌদা সিরসায় একটি নিজস্ব বাজার তৈরি করেছে। সেখানে সব দোকানেরই নাম শুরু ‘সাচ’ দিয়ে। সিরসা ছাড়াও দেশেবিদেশে আরও ৪৬টি আশ্রম রয়েছে রাম রহিমের। রাম রহিম নিজেকে ‘মেসেঞ্জার অব গড’ বলেন। তার ‘এমএসজি’ ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু-তেল-সাবানের মতো হাজারো সামগ্রীর ব্যবসাও চলে এই আশ্রম থেকেই। আশ্রমে রাম রহিমের প্রবচন শুনতে দিনে গড়ে ৩০ হাজার লোক জড়ো হয়। মাত্র ছয়মিনিট ভক্তদের উপদেশ দেন। তারপরেই মঞ্চে ডিজে উঠে গান বাজাতে শুরু করেন।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই সিরসার ডেরায় ‘মিউজিক্যাল কার্নিভাল’ এর আয়োজন হয়েছিল। ১২ আগস্ট রাতের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অন্তত ৭০ লাখ মানুষ। মাঝরাতে মঞ্চে ওঠেন রাম রহিম। অদ্ভূতদর্শন লালরঙের আলো ঝলমলে গাড়িতে। তারপর গান শোনাতে শুরু করেন। জলসা চলে রাত তিনটে পর্যন্ত। রাম রহিম নিজেও অবশ্য কয়েকশ কনসার্ট করেছেন। বাবাজি ১৫ আগস্টেই ৫০ বছরে পা দিলেন। সেদিন তিন ইঞ্চি পুরু ৪২৭.২৫ বর্গফুটের কেক তৈরি হয়েছিল। তার উপরে একসঙ্গে দেড় লাখ মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল।
ধর্মগুরু রাম রহিম অবশ্য সংসারী। স্ত্রী হরজিত কউর ও তার একপুত্র ও দুই কন্যা রয়েছেন। এছাড়াও একটি কন্যা দত্তক নিয়েছেন তিনি। মেয়েরা তার সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। ছেলে জসমিতের বিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা হরমেন্দ্র সিং জস্সির কন্যার সঙ্গে। বড় মেয়ে চরণপ্রীতের দুই ছেলে রয়েছে। বাবাজি আদর করে নাতিদের নাম দিয়েছেন , সুইটলাক ও সুবাহ-এ-দিল।