। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত এ মনীষী ১৯৭৬ সালের এদিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত-বৈভবের কাছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সামপ্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। নির্ভীক চিত্তে মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত।
জাতীয় কবি কাজীয় নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ই জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। তার জীবনের কৈশোর ও যৌবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, ঢাকা ও কুমিল্লায়। বাংলাদেশেই রচনা করেছেন তিনি তার বিখ্যাত সব সাহিত্যকর্ম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪শে মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে সপরিবারে কবি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ‘জাতীয় কবি’র মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দান করেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর কাজী নজরুল ইসলামকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একই বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। কবির জীবনের শেষদিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। ৭৭ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। এ উপলক্ষে আজ বাদ ফজর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ জমায়েত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ভিসির সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী। বাংলা একাডেমিও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় কবির ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। এ উপলক্ষে সকাল ৭টায় একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. শামসুজ্জামান খান। নজরুল বিষয়ে একক বক্তৃতা দেবেন প্রফেসর সৌমিত্র শেখর। সন্ধ্যায় নজরুল সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেবেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পীগণ। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নজরুল পদক-২০১৬’ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ অনুুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ছায়ানট নজরুলের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সকাল ৭টায় জাতীয় কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |