ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ধর্ষণ মামলার রায় নিয়ে শুরু হয়ে গেছে সহিংসতা। যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল ঠিক তেমনটিই ঘটেছে। রহিম সিং তার দুই ভক্তকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরপরই ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র সহিংসতার ঘটনা। ইতিমধ্যেই এসব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০ জন। দাঙ্গা থামাতে পঞ্চকুলায় মোতায়েন করা হয়েছে ৬০০ সেনা। এর আগে পুলিশ রহিম সিংয়ের অনুসারীদের থামাতে গুলি ছুড়েছে। পাশাপাশি নিক্ষেপ করা হয়েছে, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান। কিন্তু সংখ্যায় পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় অনুসারীদের থামাতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। উল্লেখ্য, আদালত প্রাঙ্গণে রহিম সিংয়ের প্রায় ১ লাখ অনুসারী জড়ো হয়।
শুক্রবার পঞ্চকুলার বিশেষ সিবিআই কোর্ট এ রায়ে ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং। রায়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বিচারিক হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার তার সাজা ঘোষণা করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তার সর্বনিম্ন ৭ বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল হতে পারে। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। রাম রহিম সিং হরিয়ানার উগ্র ধর্মীয় দল ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান গুরু। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তার হাজার হাজার অনুসারী আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পঞ্চকুলায় ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নিরাপত্তা জোরদারে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের রাস্তায় মোতায়েন করা হয় ৫৩ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী ও ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য। রাম রহিম সিংয়ের কয়েক লাখ অনুসারী রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছিল, রায় বিপক্ষে গেলে তার অনুসারীরা হাঙ্গামার সৃষ্টি করতে পারে। ২০০২ সালে রাম রহিমের বিরুদ্ধে এক নারী ভক্ত ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে লেখা বেনামী চিঠিতে তিনি বলেন, গুরু রাম রহিম তাকে সহ আরো কয়েকজন মহিলা ভক্তকে হরিয়ানার সির্সায় অবস্থিত নিজের আশ্রমে ধর্ষণ করেছেন। তার এ অভিযোগ ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) যৌন নির্যাতন মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। সিবিআই ১৮ জন ভক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে দুজন ওই আধ্যাত্মিক গুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এক ভক্ত বলেন, ঘটনার দিন গুরু রহিম সিংয়ের ‘চেম্বার’ এ প্রবেশ করামাত্রই কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এসময় গুরু রহিম সিং বিরাট পর্দায় পর্নোগ্রাফি দেখছিলেন। এ কক্ষে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। এসব বিবৃতি অনুযায়ী সিবিআই ২০০৭ সালের ৩০শে জুলাই মামলা দাখিল করে। ২০০৮ সালে গুরু রহিম সিংয়ের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাকে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৩৭৬ (ধর্ষণ) ও ৫০৬ (অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শন) ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ উত্থাপনের ১৫ বছর পর গতকাল ৫০ বছর বয়সী গুরু রাম রহিম সিংকে দোষী সাব্যস্ত করল হরিয়ানার আদালত। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার বলেন, যে রায়ই হোক না কেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করব। তার সরকার যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। তিনি মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। রায় ঘোষণার দুই ঘণ্টা আগে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা কোর্ট সরকারকে জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। গুরু রহিম সিংয়ের অনুসারীরা আইন অমান্য করলে বা উত্তেজক বিবৃতি দিলে প্রয়োজনে এফআইআর দাখিল করার নির্দেশনা দেয় কোর্ট। গতকাল সকাল ৯টায় বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে আদালতের উদ্দেশ্যে নিজের আশ্রম সির্সা ত্যাগ করেন গুরু রাম রহিম সিং। আশ্রম থেকে আদালতের দূরত্ব প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। তার গাড়ি বহরে ২০০টির বেশি গাড়ি আছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হরিয়ানা পুলিশের ডিজিপি বিএস সন্ধু নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, শুধু নিরাপত্তায় নিয়োজিত কয়েকটি গাড়ি আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে। গুরু রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে আরো দুইটি হত্যা মামলা রয়েছে।