প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আদালতে তিনি যা বলেন তার কিছু বিকৃতভাবে আসে গণমাধ্যমে পাকিস্তানের উদাহরণ উল্লেখের পর তুমুল বিতর্কের মধ্যে তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ প্রণীত `judicial interpretation’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
তবে কোন বক্তব্য কবে এবং কীভাবে ভুলভাবে এসেছে, সেটা বলেননি প্রধান বিচারপতি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার একটা আবেদন, আমি প্রকৃতপক্ষে কোনো ইয়ো করি না। আপনারা আমাকে অনেক ইয়ো করছেন। কিন্তু একটু মিসকোট করবেন না। আমাকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।’
‘আমি কোর্ট যা বলি তার কিছু ডিস্টোর্টেড (বিকৃত) ইয়ো করা হয়। এতে গিয়ে আমি… বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এটা যাতে আমাকে না পড়তে হয়।’
গত ২০ আগস্ট নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট প্রকাশের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি অন্য অনেক কথার সঙ্গে সম্প্রতি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ আনেন। বলেন, ‘পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করল। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্কতা দরকার।’
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন প্রধান বিচারপতির। যে পাকিস্তানকে যুদ্ধে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে জনগণের কাছে বিচারও চান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা… সব সহ্য করা যায়, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা সহ্য করব না।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করছেন সরকারপন্থীরা।
এসব সমালোচনার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাকে প্রেস কনফারেন্স করে কোনো কিছু বলা… এটা সম্ভব না। এটা বিচারক হিসেবে কোনো কোনো মামলার শুনানির সময় আইনজীবীকে একটা প্রশ্ন করতে পারি। এটা আমার স্বাধীনতা। প্রশ্নটা কী কারণে কোন উদ্দেশ্যে, সেটা না বুঝে এটা করাটা… এটা অনেক সময় ভূলভ্রান্তি হতে পার। এটা একটু খেয়াল করবেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকরা হয়তো ছাত্রজীবনে বা প্রফেশন জীবনে প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা থাকতে পারে রাজনীতি নিয়ে। আমরা বিচারকরা যখন বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করি এবং দেশে যারা বিচারক আছেন আপিল বিভাগে, হাইকোর্ট বিভাগ কিংবা নিম্ন আদালতে, তাদেরকে বলবো- আপনারা আপনাদের পাস্ট (অতীত) ভুলে যান। এই বিচার ভিাগের আপনি যখন বিচারক আপনাকে প্রেজেন্ট এবং ফিউচার নিয়ে ভাবতে হবে।’
‘অনেক..আমরা দেখি নিরপেক্ষভাবে বিচার করার জন্য। বিচার করতে গেলে কে কি রাজনীতি করত সেটা, যদি রাজনীতি করতে হয় আপনারা ছেড়ে চলে আসেন। বিচারক যদি হোন নিরপেক্ষভাবে করবেন। এটা আপনাদের প্রতি মানুষের অধিকার।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা প্রসঙ্গ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলা আপিল এবং রিভিউয়ের রায় নিষ্পত্তির কথাও তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘আমি যখন মামলার ইয়ো করি তখন এত কষ্ট লাগলো। এই মামলাতে অনেক কিছু ছিল। একটা বাচ্চা ছেলে রাসেল তাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? এটা পশুর চেয়েও ইঅ। কিন্তু এর নথি যখন পর্যালোচনা করলাম, যেহেতু এটা ফাইনাল কোর্ট, আমরা দেখলাম অনেক ত্রুটি ছিল এই মামলায়। যেরকম ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটি ছিল, সেরকম প্রসিকিউশনের ত্রুটি ছিল।’ ‘আমি হয়তো ভবিষ্যতে কিছু লেখার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি তুলে ধরবো শুধু এই মামলা না, জেল হত্যা মামলাও। সেখানেও কিন্তু অনেক ত্রুটি ছিল এবং অনেক গাফিলতি ছিল। আপনারা দুইটা রায় পর্যালোচনা করে দেখবেন। আমরা ট্রায়াল কোর্টের জাজমেন্ট এবং আপিল হাই কোর্টের জাজমেন্ট কিন্তু আমরা মানিনি। আমরা দুই রায়ই না মেনে পরিস্কার বলেছি এটা ক্রিমিনাল কনসপেরেসি ছিল। ক্রিমিনাল কনসপেরিসি যদি হয় এটা একেবারে ক্যান্টনম্যান থেকে কনসপেরেসি হয়েছে। এই কনসপেরিসে কে কে জড়িত ছিল?’ ‘কনসপেরেসিতে যদি একজন লোকও থাকে এবং তার সাথে যদি আর যারা আছে প্রত্যেকেই সমভাবে দায়ী। আমরা মাত্র ১৫, ১৬, ২০ জনের বিচার করেছি। যারা সেই রাত্রে মার্চ (মিছিল) করেছিল, মার্চ করার পরে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিল, মার্চ করে ৩২ নম্বরে আনা হয়েছে, তখন তো কনসপেরেসি ক্লিয়ারলি ডিসক্লোজড (প্রকাশ) হয়ে গিয়েছিল।’
ষড়যন্ত্রে কারা ছিল দেখিয়ে যাব
‘এখন যারা বড় বড় কথা বলেন, আমি একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে মুখ খুলতে পারছি না’ মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কিন্তু আমি হয় তো কিছু লিখে যাব। আমি দেখিয়ে দেবো যারা ষড়যন্ত্রের মধ্যে কারা কারা ছিল। কী রকম গাফিলতি হওয়ার পরেও যারা সেনাবাহিনীর মধ্যেও অনেকজন যারা কোষাগার থেকে সুবিধা নিয়ে চলে গেছেন। তারা তো পাওয়ার কথা ছিল না।’