ঘরহীন, ঘুমহীন। দিনের পর দিন কাটছে বাঁধে, আশ্রয়কেন্দ্রে। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। বানের পানি কমছে কিন্তু দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না। নতুন করে কিভাবে গড়বেন নিজেদের ঘর। বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঘর, ঘরের আসবাবপত্রসহ সর্বস্ব। বিমর্ষ চেহারা নিয়ে সাহায্যের আশায় পথ চেয়ে থাকেন তারা। সরজমিন ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে জামালপুর জেলার বন্যাকবলিত মেলান্দহ ও ইসলামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। মেলান্দহ উপজেলার ইমামপুরে স্বামীর তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে তিন সন্তানকে নিয়ে ভালোই কাটছিল বিধবা ওহিলা বেগমের। গত ১০ দিন আগের সকালে চোখের সামনেই তার সর্বস্ব কেড়ে নেয় বন্যা। ঘরের রান্নার বাসন থেকে আসবাবপত্র ভেসে যায় পানিতে। ঘরটিও ভেঙে পড়ে। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধা। এখন তিনি তিন সন্তানসহ আশ্রয় নিয়েছেন ইমামপুর-তালতলা বাঁধে। একইভাবে এই বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধিদের ওপর। চিৎকার করে হাফিজুর রহমান নামে এক যুবক বলেন, ভোটের সময় ওয়াদার শেষ থাকে না। এখন বিপদের সময় চেয়ারম্যানের চেহারাও দেখি না। একই অভিযোগ করেন বাঁধে আশ্রয় নেয়া নাজু বেগম, জামাল উদ্দিন, শরীফ মিয়াসহ অনেকে। একইভাবে জনপ্রতিনিধিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন ইসলামপুরের নোয়াপাড়ার বাসিন্দারা। সাইফুল ইসলাম, জমিলাসহ বন্যার্তরা জানান বন্যা শুরুর পর থেকে চেয়ারম্যানের মুখ দেখতে পাননি তারা।
বন্যায় ঘর হারানোর পর থেকে খেয়ে না খেয়ে আছেন জানিয়ে কান্না করছিলেন ইসলামপুর উপজেলার উত্তর জোরডুবা গ্রামের বৃদ্ধ সওদাগর প্রামাণিক। গতকাল বেলা ৩টার দিকে উলিয়া বাঁধে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘর নাই, খাওন নাই, বাঁচমু কি কইরা। বিয়াইন বেলায় একজনে এডা রুডি দিছিল, ওইড্যা খাইয়া এহন পর্যন্ত দিন কাটাইতাছি।’ কথা বলতে বলতে কাঁপছিলেন এই বৃদ্ধ। ওই সময়ে মাটির তৈরি ‘আলোক’ চুলায় রান্না করছিলেন ওই বাঁধে আশ্রয় নেয়া চার সন্তানের জননী আনেছা। তিনি জানান, সকালে বাচ্চাদের অল্প খেতে দিয়েছেন। এখন আবার খাবারের জন্য কান্না করছে। আশ্রয়কেন্দ্র সংলগ্ন আত্মীয়ের বাড়ি থেকে চাল এনেছেন তাই রান্না করছেন। আনেছা জানান, সাপধরি গ্রামে তাদের বাড়ি। বন্যায় ঘরটি ভেঙে গেছে। নতুন করে কিভাবে ঘর তৈরি করবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার। আপাতত পলিথিনের বেড়া দিয়েই থাকতে হবে বলে জানান আনেছা।
বন্যার্তদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাত ইশরা দিয়ে নিজের দুর্ভোগের বর্ণনা দিচ্ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী সাজেদা বেগম। তার প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম জানান, সকালে ঘুম ভেঙে দেখেন ঘরের পাশে পানি। দেখতে দেখতেই ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। তখন জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী সাজেদা। এর মধ্যেই তার আড়াই বছরের শিশুটি খাট থেকে পানিতে পড়ে ভেসে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিশুকে উদ্ধার করেন সাজেদা। তারপর থেকে শিশুটি অসুস্থ। তাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বাঁধে দিনাতিপাত করছেন এ নারী।
ঘর হারানোর পর হালের বলদ বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কটাপুর গ্রামের আনিস শেখ। আনিস বলেন, আটজনের পরিবার। জমি চাষ করে, অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চলে। বন্যায় ঘরটি ভেসে গেছে। থাকতে হলে তো ঘর তৈরি করতে হবে। দুটি বলদ বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আগে তো জীবন বাঁচাতে হবে।
ইসলামপুরের নোয়াপাড়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল বলেন, সরকার ত্রাণ দিচ্ছে কিন্তু তা সঠিকভাবে বিতরণ করা হচ্ছে না। নানা অনিয়ম হচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এরকম অভিযোগ ইসলামপুর, মেলান্দহসহ বিভিন্ন এলাকার বন্যাদুর্গতদের। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে জামালপুরের সংরক্ষিত আসনের এমপি মাহজাবীন খালেদ বেবি বলেন, দু’-এক জায়গায় যে অনিয়ম হয়নি তা বলবো না। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে আরো সতর্ক হতে হবে। তবে অনেক স্থানে বন্যার্তরা ত্রাণ পেয়েও অস্বীকার করেন আরো পাওয়ার আশায়। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |