এবছরের বন্যার পানি দেশের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।  বাংলাদেশের ইতিহাসে বন্যায় রেকর্ড হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতীতের রেকর্ডের চেয়েও যা চার সেন্টিমিটার বেশি।

সোমবার দুপুরে মতিঝিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টায়  বন্যা কমার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুর থেকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এত পানি বাংলাদেশে আর কখনো হয়নি এখানে।

সাইফুল ইসলাম বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের উজানের অববাহিকায় (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা) নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশে গড়ে ৩২ সেন্টিমিটার ও বাংলাদেশের অংশে ৪৭ সেন্টিমিটার গঙ্গা-পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশে ১১ সেন্টিমিটার ও বাংলাদেশের অংশে ২২ সেন্টিমিটার এবং মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কশিয়ারা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে।

বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি

ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাংলাদেশ অংশে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধির হার গড়ে ৪৭ সেন্টিমিটার। ফলে নুন খাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে আজ সকাল ৯টায় বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৩, ১১৮, ৯০ এবং ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এই নদীর পানি ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি অবনতিশীল থাকবে।

গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বর্তমানে বিপদসীমার ১.২৫ থেকে ১.৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অববাহিকার উজানে নেপালে ও বিহারে বন্যা পরিস্থিতি থাকার ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

এসময় তিনি বলেন, নেপাল এবং বিহারের পানি বাংলাদেশের উপর দিয়েই প্রবাহিত হয়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্তীকরণ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, গত চার থেকে পাঁচ দিন থেকে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির ফলে উত্তরের এবং উত্তর- পূর্বের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতিশীল রয়েছে এবং এই বন্যা পরিস্থিতি মধ্যাঞ্চল ও ‍দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। গঙ্গা অববাহিকার পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার বেশ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চতুর্দিকের পাঁচটি নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, তবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই।

এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি প্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরেই দেশের প্রধান প্রধান নদনদী বইছে বিপদসীমার ওপরে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিনাজপুরে পানিতে ডুবে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে বেশ কিছু শহরে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রধান প্রধান নদনদী ২৭টি পয়েন্টে বইছে বিপদসীমার উপরে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারার পানি বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে।

জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ১০০ সেন্টিমিটার, গাইবান্ধার বদরগঞ্জে যমুনাশ্বরী ১২৬ সেন্টেমিটার, সুরমা নদী সুনামগঞ্জে ৯১ সেন্টিমিটার, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। বিপদসীমা সবচেয়ে বেশি অতিক্রম করেছে কংস। নেত্রকোণার জারিজঞ্জাইল পয়েন্টে এই নদী বইছে বিপদসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

Share Now
May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031