শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রামে বসে শিক্ষার্থী পরিচয়ের আড়ালে অবৈধ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছেকক্সবাজারের টেকনাফের । নেশাদ্রব্য ইয়াবা বড়ি পাচারের সাথে জড়িত ছাত্র নামধারী এসব মাদক ব্যবসায়ীর অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে এসব ছাত্ররা গাড়ি-বাড়ি এবং বিপুল নগদ টাকার মালিকে পরিণত হচ্ছে। জানা গেছে, ছাত্র নামধারী ইয়াবা কারবারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম বসেই নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় মাদক ব্যবসা।

স্থানীয়রা জানান, টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত অনেক পরিবারের সন্তানরা ঢাকা-চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলে পড়ছে। তাদের সিংহ ভাগ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এদের দেখাদেখি টেকনাফের অসচ্ছল পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীও জড়িয়ে পড়ছে এ ব্যবসায়। সীমান্তের সচেতন অভিভাবকরা জানান, পরিবারের সদস্যরা টেকনাফ থেকে গাড়ির যোগানে করে বস্তা বস্তা ইয়াবার চালান পাচার করে। ঢাকা-চট্টগ্রামের নাম সর্বস্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া সন্তানেরা টেকনাফে নিজ পরিবারের মাধ্যমে পাচারকৃত ইয়াবার চালান রিসিভ করে গুদামজাত করে শহরের আনাচে-কানাচে সহজে পৌঁছে দিচ্ছে। সেখানে পড়তে যাওয়া গরীব পরিবারের অনেক সন্তানও ফাঁদে পড়ে ইয়াবার অন্ধকার জগতে পা দিচ্ছে। ছাত্রত্বের আড়ালে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে বিষয়টি আশংকার কারণ বলে মনে করছেন সচেতন অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ-মাদ্রাসা ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট ইয়াবাসহ হাতে-নাতে আটক হচ্ছেন। তারা সবাই চিহ্নিত অবৈধ ইয়াবা পাচারকারী পরিবারের সন্তান বলে জানা গেছে। এসব পরিবার থেকে আগত ছাত্ররা নগরে চলাচল করে রাজপুত্রের মতো। তারা পারিবারিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্রত্বের আড়ালে ভয়াবহ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামে ছাত্রত্বের আড়ালে টেকনাফের যেসব শিক্ষার্থী এবং পরিবার মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সচেতন অভিভাবক মহলের দাবি। এভাবে চলতে থাকলে পুরো শিক্ষাঙ্গন ধীরে ধীরে এসব ছাত্রবেশী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

উপজেলার হ্নীলা এলাকার অভিভাবক বাহাদুর শাহ তপু জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে পড়ার নাম ভাঙ্গিয়ে হ্নীলা-টেকনাফের অনেক স্টুডেন্ট ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। হ্নীলার রঙ্গিখালী, লেদা, সিকদারপাড়া, পানখালীসহ বিভিন্ন এলাকার উদ্ধৃতি দিয়ে এ অভিভাবক আরো বলেন, এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের যারা বাইরে অধ্যয়ন করছেন তাদের বিরাট একটি অংশ সেখানে বসে শুধু মাদক ব্যবসা করছেন।

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে স্বীকার করে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব টেকনাফ (চুসাট) সভাপতি জাহেদ হোসেন পুলক বলেন, বিষয়টি মহাবিপদের লক্ষণ। জাতীয় স্বার্থে মাদক ব্যবসায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনিক নজরদারীর দাবী জানিয়েছেন এ ছাত্র নেতা।

বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে জানিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক লুকাশীষ চাকমা বলেন, ইয়াবাসহ টেকনাফের অনেক ছাত্র আটক হওয়ায় অনেক আগে থেকে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বাইরে টেকনাফের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কি পরিমাণ শিক্ষার্থী মাদক ব্যবসায় জড়িত তার হিসাব নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, চিহ্নিত মাদক পরিবারের ছেলে-মেয়েদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাইন উদ্দিন খাঁন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অসচেতনতার কারণে শিক্ষার্থীরা আসলে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। টেকনাফের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, প্রজন্ম রক্ষায় ছাত্রত্বের আড়ালে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশসহ সব বাহিনী কাজ করছেন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031