জেলা পুলিশ মাদকমুক্ত করতে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে বৈঠক করেছে উখিয়া-টেকনাফকে। বৈঠকে উখিয়া ও টেকনাফ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা মরণ নেশা ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকা শহরে গেলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। অনেকে ইয়াবা এলাকার লোক বলে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে। তখন মাথা নিচু হয়ে যায়। বৈঠকে ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তার রোধে সবাই এক সাথে কাজ করত ঐক্যমত্যে পৌছেন।
বৈঠকে পুলিশ সুপার একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। ইয়াবা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। দেশকে ইয়াবামুক্ত করা না গেলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। তিনি মাদক নির্মূলে জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, জনগণ যদি সোচ্চার না হয়, পুলিশের একার পক্ষে মাদক প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তিনি মাদক প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ইয়াবা এখন স্থানীয় সমস্যা নয়। এটি জাতীয় সমস্যায় রুপ নিয়েছে। ইয়াবা নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এক সাথে কাজ করতে হবে। তিনি ইয়াবার বিরুদ্ধে জনগনকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি পুলিশের হাতে যেন কোন নিরীহ লোক হয়রানির শিকার না হয় তার উপর গুরুত্ব দেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ইয়াবা প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে পুরো জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। তিনি ঘরে বাইরে ভেজাল রয়েছে উল্লেখ করে সবাইকে পরিশুদ্ধ হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহবান জানান।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী পুলিশের ইয়াবা বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানান। বলেন, অভিযান অব্যাহত থাকুক। কিন্তু কোন নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে অনেক জনপ্রতিনিধি সরাসরি জড়িত। ইয়াবা প্রশ্নে জনপ্রতিনিধিদের নিষ্ক্রয়তায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য কবি আদিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উখিয়া উপজেলার কোটবাজার এলাকা এখন মাদক ও অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্য। উদ্বেগজনক হারে উঠতি বয়সের যুবকরা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, সবাই যদি মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা না করি, একদিন এই মাদক সবাইকে গ্রাস করবে।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, তার অবস্থান সব সময় ইয়াবার বিরুদ্ধে। তিনি পুলিশের সমালোচনা করে বলেন, অনেক সময় পুলিশ দলীয় লোকদের অন্যায় ভাবে হয়রানি করে। অথচ বিএনপি-জামায়াত লোকদের ধরে না। তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফে জামায়াত-বিএনপির লোকজনই সবচেয়ে বেশি ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু অদৃশ্য কারনে পুলিশ তাদের ধরছে না।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়ার আনাচে কানাচে ইয়াবা ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশী অভিযান আরও জোরদার করার দাবী জানান। তিনি রাতারাত যারা নোয়া, হোন্ডা, জীপ, ট্রাক, বাস ও আলিশান বাড়ীর মালিক হয়েছে তাদের আয়ের উৎস কি তা বের করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, তাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি করা হলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়বে। ভয়ে অনেকেই ব্যবসা গুড়িয়ে নেবে।
বৈঠকে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, চেয়ারম্যান এইচ কে আনোয়ার বক্তব্য রাখেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল, এসপি সার্কেল উখিয়া চাই লাউ মারমা, ডিএসবি পুলিশের সিনিয়র এএসপি কাজি মোহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ, টেকনাফ থানার ওসি মাইন উদ্দিন, উখিয়া থানার ওসি মো: আবুল খায়ের, টেকনাফ থানার ওসি তদন্ত শেখ আশরাফুজ্জামান, আওয়ামীলীগ নেতা এম এ মনজুর, সোনা আলী, বরুল হাসান মিল্কি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, চেয়ারম্যান এসএম ছৈয়দ আলম, সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী, টেকনাফ আওয়ামীলীগ নেতা হারুন সিকদার, উখিয়া আওয়ামীলীগ নেতা এড. রুহুল আমিন চৌধুরী রাসেল প্রমুখ।