বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সৈয়দ আবুল মকসুদ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ রাখলেন না। তার মতে, এভাবে আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। এ কারণেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোমবার নির্বাচন কমিশনে এই সংলাপে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক সমাজের সদস্যরা অংশ নেন। এর মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হলো বলা চলে।
এই সংলাপে অংশ নিতে আবুল মকসুদকেও গত ২৩ জুলাই আমন্ত্রণ জানায় নির্বাচন কমিশন। এই আমন্ত্রণপত্র পেয়ে অত্যন্ত সন্মানিতবোধ করার কথাও জানানা মকসুদ। তবে তিনি এই আমন্ত্রণ না রেখে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তার সংলাপে অংশ না নেয়ার কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি কিছু পরামর্শও তুলে ধরা হয়।
নির্বাচন কমিশন যে সংলাপের আয়োজন করেছে, তাতে বিশেষ লাভ হবে না বলেও মনে করেন আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এভাবে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়ে বৈঠক হবে একটি ঘটনা বটে, কাজের কাজ কিছু হবে, সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
আবুল মকসুদ বলেন, ‘আট-দশ জন করে ডেকে মতামত নিলে এবং তা তাদের থেকে লিখিতভাবে নিলে আপনাদের পক্ষে সেসব Collade বা বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসা সহজ হতো।’
নির্বাচন কমিশন ৬০ জন খ্যাতিমান ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানালেও সংলাপে পর্যাপ্ত সময় রাখা হয়নি বলে মনে করছেন মকসুদ। তিনি বলেন, ‘তাদের মতামত জানানোর জন্য প্রত্যেকে পাঁচ মিনিট করে তার বক্তব্য রাখলে পাঁচ ঘণ্টার প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন দিকেরও বক্তব্য থাকবে। সবমিলে ঘণ্টা ছয়েক প্রয়োজন। সময়ের কথা বিবেচনা করে অনেকের বক্তব্য দেয়া সম্ভব হবে না। তার ফলে ভালো উদ্যোগটি অর্থবহ হবে না।’
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে সংলাপে বসার আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা, বিশেষ করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসার তাগিদ দেন মকসুদ। তিনি বলেন, ‘বাধাগুলো যেন সরকারের দিক থেকে, সরকারি দলের দিক থেকে না আসে। সেটা সিভিল সোসাইটি নিশ্চিত করতে পারবে না।’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল রাখাকে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হিসেবে দেখছেন মকসুদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নিজেদের সংশোধিত সংবিধান অনুসারে দশম সংসদ বলবৎ থাকবে, সংসদ সদস্যরা বহাল তবিয়তে থাকবেন। একজন এমপির সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অস্বাভাবিক ব্যাপার। একজন সাধারণ ভোটার হিসেবে সেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তা একেবারেই অসম্ভব।’
‘এমপি মহোদয়গন ন্যায়পরায়ণতার পরাকাষ্ঠা হবেন এবং তারা ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নিরপেক্ষ সত্যের পক্ষে দাঁড়াবেন, তা ভাবতে আমার মন সাড়া দেয় না।’
ষোল আনা স্বদিচ্ছা থাকা শর্তেও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন মকসুদ। এ জন্য নাগরিক সমাজকে নিয়ে বসার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে বোঝাপড়া করা আবশ্যক ছিল বলেও মনে করেন তিনি।
নির্বাচনের সময় কী রকম সরকার বা প্রশাসন দেশে থাকে সেটার উপরও কমিশনের স্বাধীন দায়িত্ব পালন অনেকটা নির্ভর করছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন মকসুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও জানি না ওই সময়ের সরকারটি কেমন হবে। যারা সরকারে থাকবেন তারাই যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব।’
একটি শক্তিশালী অর্থাৎ ‘শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন’ নির্বাচন কমিশন জরুরি মন্তব্য করে মকসুদ উল্লেখ করেন, ‘সে নির্বাচন কমিশন সরকারি দলের পেশীশক্তিধরদের অন্যায্য আবদার ও অবৈধ কার্যকলাপের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবে।’
‘মতামত লিখিত দেয়াই ভালো’
ঢাকাটাইমসকে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সংলাপে গেলে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায় না। অনেক মানুষ, এদের মধ্যে কথা বলাও কঠিন। তাই আমি মনে করেছি আমার কথাগুলো লিখে পাঠালে ভালো হয়। এতে আমি কী বলতে চাই সেটাও বলা হল। আবার যাদের দরকার তারাও সময় নিয়ে বিষয়টি পড়ে দেখতে পারবেন।’
অতীতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো সংলাপে গিয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘হ্যাঁ, গিয়েছি (সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে)। সংলাপের ধারণাটাই তো আমরা এনেছি।’
মকসুদ মনে করেন, সংলাপ একটি আনুষ্ঠানিকতা। এটার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় মতামত নেয়া তাহলে লিখিত দেয়াটাই ভালো। তা না হলে এত মানুষের মধ্যে কে কী বললেন মনে রাখাও কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে অমনোযোগিতার কারণে ভালো কিছু বাদ পড়ে যেতে পারে।