‘আমার ট্যাহা-পয়সা লাগব না, আমার সোনার মানিকগো আমার বুকে আইনা দেন। আমাগো একটুখানি ভালো রাহনের জন্য সোনারা আমার দূর দেশে থাহে।’ এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সন্তান হারানো নূরজাহান বেগম। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই কারোরই। এমনই আহাজারি চলছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার আরও দুটি পরিবারে।শুক্রবার ভোরে সৌদি আরবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গোয়ালন্দের চারজনসহ ছয় বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের দরাপেরডাঙ্গী গ্রামের অহেদ আলী বেপারীর ছেলে এরশাদ আলী বেপারী (৩০) ও হুমায়ন বেপারী (২৫), দক্ষিণ উজানচর নাছের মাতুব্বরপাড়া গ্রামের ওসমান খাঁর ছেলে কোব্বাত আলী খাঁ (২৪), দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর দৌলতদিয়া আনছার মাঝিরপাড়া গ্রামের ছাহের মণ্ডলের ছেলে মিরাজ মণ্ডল (২২), ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের হারান দেওয়ানের ছেলে ইদ্রিস দেওয়ান (৩২) এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার অজ্ঞাতপরিচয় একজন। তারা সবাই নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন।নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, একটি মাইক্রোবাসে করে ওই ছয়জন দাম্মাম শহর থেকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আলজুময়ারা শহরে যাচ্ছিলেন। পথে একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তারা প্রাণ হারান। শুক্রবার রাতে তাদের মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছায়।শনিবার গোয়ালন্দে চার শ্রমিকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, স্বজনের আর্তনাদ কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। দরিদ্র পরিবারগুলো সুখের আশায় তাদের সন্তানদের প্রবাসে পাঠিয়েছিল। এই মৃত্যুর খবরে তাদের সেই সুখের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দুই ছেলে এরশাদ ও হুমায়নকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন মা নূরজাহান বেগম।
এরশাদের স্ত্রী শিউলী আক্তার জানান, ছয় মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাস পরই এরশাদ সৌদি আরবে চলে যান। সংসারের সচ্ছলতার জন্য ছোট ভাই হুমায়নকেও সেখানে নিয়ে যান তিনি। শিউলি বলেন, বৃহস্পতিবার এরশাদ তাকে জানিয়েছিলেন, কোরবানির ঈদে দেশে আসবেন। তিনি আসবেন ঠিকই, তবে নিথর দেহে।একসঙ্গে দুই ছেলেকে হারিয়ে বাবা অহেদ আলী বেপারীও যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, আমার সোনার সংসার এক মুহূর্তে খানখান হয়ে গেল।নিহত কোব্বাত আলী খাঁর বাবা ওসমান খাঁ জানান, ছেলেকে প্রথমে লিবিয়া পাঠিয়েছিলেন। সেখানে প্রতারিত হয়ে কোব্বাত দেশে ফিরে আসেন। এরপর ৮-৯ মাস আগে ধারদেনা করে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠান। ছেলে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০-৬০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। এ সময় বুক চাপড়ে ওসমান খাঁ বলতে থাকেন, এত বড় শোক আমি কীভাবে সহ্য করব?
উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আবুল হোসেন ফকির জানান, এ দুর্ঘটনার খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি নিহত প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছেন। লাশ দেশে আনার জন্য তাদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |