প্রযুক্তি নিয়ে নিয়মিত গবেষণার ভিত্তিতে স্থানীয় বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক সব প্রযুক্তির টেলিভিশন নিয়ে আসছে ওয়ালটন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ওয়ালটনের নতুন চমক- ইন্টারনেটভিত্তিক ৩২ ইঞ্চি এন্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি। যা নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করা যাবে এন্ড্রয়েড এবং আইওএস সমৃদ্ধ সকল ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন দিয়ে। এক্ষেত্রে টিভি রিমোট ছাড়াই এর সকল কাজ সম্পন্ন করবে গ্রাহকের হ্যান্ডসেটে ইনস্টলকৃত ই-শেয়ার অ্যাপসের রিমোট অপশনটি। যেখান থেকে গ্রাহক তার সুবিধামত কী রিমোর্ট, টাচ রিমোট, মাউস ও এয়ার মাউস- এই চারটি ভিন্ন ফরমেটের রিমোট অপশন বেছে নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে গ্রাহক ঘরের যে কোন প্রান্ত থেকেও মুঠোফোনে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন টিভির কনটেন্ট।
সম্প্রতি দেশের টেলিভিশন বাজারে বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি ছেড়েছে ওয়ালটন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মডেলের স্মার্ট টিভি ছেড়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি। যেগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ২৪,৫০০ টাকা, ২৫,৫০০ টাকা ও ২৫,৯০০ টাকা। আপকামিং এর তালিকায় রয়েছে আরও দুটি মডেল।
ওয়ালটনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির স্মার্ট টিভির বিশেষ দিক সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির টেলিভিশন গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএ্যান্ডডি) বিভাগের ফার্স্ট সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী মো. সাজেদুর রহমান জানান, নতুন এই টিভির মাদারবোর্ডে ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চ গতি সম্পন্ন কোয়াড-কোর প্রসেসর। সংযোজন করা হয়েছে বিল্ট ইন ওয়াই-ফাই। এতে করে, গ্রাহকরা টিভিতেই ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ডাউনলোডের কাজ করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, ওয়ালটনের স্মার্ট টিভির মাদারবোর্ডে সংযোজন করা হয়েছে বিল্ট ইন ই-শেয়ার প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে ডিসপ্লের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে টিভির ডিসপ্লে। এক্ষেত্রে অবশ্য গ্রাহকের স্মার্ট ফোনটিতেও ই-শেয়ার অ্যাপসটি ইনস্টল থাকতে হবে। এতে করে, গ্রাহকের ফোনে রক্ষিত ইমেজ, অডিও, ভিডিও প্রদর্শিত হবে টিভির পর্দায়। পাশাপাশি, টিভিতে সংরক্ষিত রোমাঞ্চকর ও মজার সব গেমস খেলা যাবে মোবাইল থেকে। আবার, টিভির ডিসপ্লে মোবাইল ফোনের ডিসপ্লেতে শেয়ার করে, টাচ এর মাধ্যমে টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ওয়ালটন স্মার্ট টিভির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির টেলিভিশন আরএ্যান্ডডি বিভাগের এই প্রকৌশলী বলেন, এন্ড্রয়েড এবং আইওএস সমৃদ্ধ সকল ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন দিয়ে পরিচালনা করা যাবে ওয়ালটনের স্মার্ট টিভি। ফলে, রিমোট ছাড়াই টিভি পরিচালনা করা যাবে।
ওয়ালটন স্মার্ট টিভি মডেলের মেকানিক্যাল ডিজাইনার প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম রিফাত বলেন, ক্রেতা চাহিদা ও গুণগত পিকচারের দিক বিবেচনা করে ওয়ালটন ই-শেয়ার টিভি ডিজাইন করা হয়েছে স্লিম ব্যাকলাইট প্রযুক্তিতে, যার পুরুত্ব মাত্র ০.৮ ইঞ্চি।
ওয়ালটন টিভি সোসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশন প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনায় গাজীপুরে নিজস্ব কারখানায় বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির মেশিনারিজ স্থাপন করেছে ওয়ালটন। গ্রাহকদের সময়োপযোগী পণ্য উপহার দিতে গড়ে তুলেছে দেশের সর্ববৃহৎ টেলিভিশন আরএ্যান্ডডি। যেখানে কাজ করছেন উচ্চ-শিক্ষিত, মেধাবী ও দক্ষ প্রকৌশলীরা। তারা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওয়ালটন টিভিতে প্রতিনিয়ত সংযোজন করছেন বিশ্বের লেটেস্ট সব প্রযুক্তি। নিশ্চিত করছেন টিভির আন্তর্জাতিক মান। যার স্বীকৃতস্বরূপ ওয়ালটন টিভি অর্জন করেছে ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) ও স্ট্যান্ডার্ডস অরগানাইজেশন অব নাইজেরিয়া প্রোডাক্ট কনফরমিটি এ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম এর টেস্টিং সার্টিফিকেট।
তিনি বলেন, উচ্চ গুণগতমানের নিশ্চয়তায় ইতোমধ্যে ওয়ালটন এক বছরের টিভি রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টির ঘোষণা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ওয়ালটন ইন্টারনেটভিত্তিক এন্ড্রয়েড স্মার্ট টিভিতে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ গুণগতমানের প্যানেল। আইএসও ক্লাস সেভেন ডাস্ট ফ্রি ক্লিন রুমে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এইচএডিএস (হাই অ্যাডভান্স সুপার ডাইমেনশন সুইচ) এবং আইপিএস (ইন প্ল্যান সুইচিং) প্যানেল তৈরি করছে ওয়ালটন। যা প্যানেলের গুণগত মান ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। এর ফলে দর্শকরা পান লার্জ ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল এবং হাই কন্ট্রাস্ট পিকচার। সেইসঙ্গে ওয়ালটন টিভি ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
সূত্রমতে, ওয়ালটন টেলিভিশনের গবেষণা ও মান উন্নয়নে আরএন্ডডি বিভাগের প্রকৌশলীরা ইতোমধ্যে প্রভূত উন্নতি লাভ করেছে। তারা উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন টেলিভিশন খাতের ইলেকট্রনিক্স, অপটিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ডিজাইনিংসহ সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে চলেছে। ইতোমধ্যে, উদ্ভাবন করেছেন কোয়ান্টাম ডট প্লাস প্রযুক্তির আগামী প্রজম্মের স্পেকট্রাকিউ টিভি। এর কালার প্রদর্শনের সক্ষমতা ৯৮.৭ শতাংশ পর্যন্ত, যা দর্শকদের নিয়ে যাবে বাস্তব রঙের দুনিয়ায়। দেখা যাবে ঝকঝকে বিশুদ্ধ রঙের ছবি। এছাড়াও, টেলিভিশন প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে ওয়ালটনের উদ্ভাবিত ২৮টি প্যাটেন্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
দেশীয় প্রতিষ্ঠানটির টেলিভিশন বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ওয়ালটন টিভিতে উচ্চমানের ছবি ও শব্দের গুণগতমান নিশ্চিত করতে ডাইনামিক নয়েজ রিডাকশন, মোশন পিকচার, সর্বোচ্চ ফ্রেম রেট, ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম সমৃদ্ধ নিজস্ব ডিজাইনের উন্নত প্রযুক্তির মাদারবোর্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। উৎপাদন পর্যায়ে নিজস্ব কারখানায় কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী মূল্যে এলইডি টিভি বাজারজাত করায় বিক্রিও হচ্ছে বেশি।
উল্লেখ্য, সর্বাধুনিক ও অটোমেটিক প্রডাকশন লাইনে তৈরি হচ্ছে ওয়ালটনের এলইডি টেলিভিশন। প্লাস্টিক কেবিনেট, স্পিকার, রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট, মাদার বোর্ড, ইলেকট্রিক ক্যাবল এবং প্যানেল প্রডাকশনের জন্য পৃথক ম্যানুফাকচারিং লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে এলইডি টিভি উৎপাদনে বাংলাদেশ যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে, তেমনি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া নিজস্ব কারখানায় মৌলিক কাঁচামাল থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করায় উৎপাদন খরচ কমে এসেছে বহুলাংশে। যার সুফল ভোগ করছেন ক্রেতারা।