যা গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন চলতি বছরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ; । এছাড়া এই শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৯১ জন; সেটাও গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন।

এবার চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসিতে ৩২ হাজার ৬৭ জন পরীক্ষার্থী ফেল করেছে। যার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে কমেছে পাসের হার। জিপিএ ৫ নেমে এসেছে গতবছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সৃজনশীল ও বহু নির্বাচনে এবার নতুন করে মানবন্টন, উচ্চতর গণিত প্রথমবারের মতো এবার সৃজনশীল হওয়া ছাড়াও পদার্থ বিজ্ঞানে খারাপ করায় এবারের ফলাফল পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে বলে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের অভিমত।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবছর পাসের হার ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ। গতবছর এ পাসের হার ছিলো ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। এবছর জিপিএ পেয়েছে ১ হাজার ৩৯১ জন ও গতবছর ছিলো ২ হাজার ২৫৩ জন। একইসাথে চট্টগ্রাম মহানগর, জেলা কক্সবাজারসহ তিন পাবর্ত্য জেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোর ফলাফল খারাপ করায় সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।

আজ রোববার বেলা ১টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে এইচএসসির ফলাফল আনুষ্ঠানিক প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাহবুব হাসান বলেন, যদিও গতবছরের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এসএসসিতে পাসের হার ৩ শতাংশ কমেছে। তারপরও সামগ্রিকভাবে ফলাফল বেশি খারাপ হয়েছে সেটা বলা ঠিক হবে না। কারণ অনান্য বোর্ডের চেয়ে চট্টগ্রাম এগিয়ে আছে।

পাসের হার খারাপ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটিতে এবছর পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গতবছর সেটি ছিলো ৮৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। ইংরেজি ১ম পত্রে এবছর পাসের হার ৮৪ দশমিক ১১ শতাংশ । গতবছর ছিলো ৯০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্রে এবছর পাসের হার ৬৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গতবছর এটি ছিলো ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ। উচ্চতর গণিত ১ম পত্রে এবছর পাসের হার ৭১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গতবছর এটি ছিলো ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। উচ্চতর গণিত ২য় পত্রে এবছর পাসের হার ৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গতবছর এটি ছিলো ৮৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

মাহবুব হাসান আরো বলেন, ফলাফল খারাপ হওয়ার পিছনে সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনের মান বন্টন ও দায়ী। কারণ গতবছর সৃজনশীলের জন্য নির্ধারিত নম্বর ছিলো ৬০ ও বহুনির্বাচনের জন্য ছিলো ৪০। অন্যদিকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় সৃজনশীলের জন্য ছিলো ৪০ ও বহুনির্বাচনের জন্য ছিলো ৩৫। এ বছর সৃজনশীলে নতুন করে হওয়া মানবন্টনে বরাদ্দ ছিলো ৭০ নম্বর ও বহুনির্বাচনে ছিলো ৩০ নম্বর। ব্যবহারিক পরীক্ষায় সৃজনশীলের জন্য মানবন্টন ছিলো ৫০ নম্বর ও বহুনির্বাচনের জন্য ছিলো ২৫ নম্বর।

আর বরাবরের মতোই মহানগর, মফস্বল ও তিন পাবর্ত্য জেলার কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক না থাকাতেও এবছরের ফলাফল খারাপ হয়েছে। এছাড়া মফস্বলে পাঠদানের উপযোগী বিজ্ঞান বিভাগের দক্ষ শিক্ষক না থাকায়ও এইচএসসির খারাপ ফলাফলের কারণ বলে জানান মাহবুব হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে অনান্যদের মধ্যে বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. আ্দুল মুবিন, বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

পাসের হার ও জিপিএ-৫

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোডে ৯৮ টি কেন্দ্রের অধীনে ২৩৮ টি কলেজে অনুষ্ঠিত এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট নিবন্ধিত ৮৩ হাজার ২২৭ জন। এর মধ্য থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে ৮২ হাজার ৪১৪ জন। এ হিসেবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ ও জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৯১ জন। ফেলের হিসাবে মোট ফেল করেছে ৩২ হাজার ৬৭ জন।

গতবছর ৯৭টি কেন্দ্র থেকে ২২৫ টি কলেজের অধীনে নিবন্ধিত ৮৭ হাজার ৫৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৮৬ হাজার ৭১৬ জন। গতবছর পাসের হার ছিলো ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ২ হাজার ২৫৩ জন।

এবছর ছাত্র পাসের হার ৫৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৬২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গতবছর ছাত্র পাসের হার ছিলো ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ছিলো ৬৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এদিকে গতবছরের তুলনায় মহানগর, জেলা , কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলাতেও পাসের হার কমেছে। এবছর মহানগরে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ও মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

গতবছর মহানগরে পাসের হার ছিলো ৭৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মহানগরবাদে চট্টগ্রাম জেলায় ৬০ দশমিক ২৩ শতাংশ ও মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় ৬৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এদিকে গতবছরের তুলনায় এছাড়াও কক্সবাজারসহ তিনপার্বত্য জেলাতেও পাসের হার কমেছে। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৫৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, রাঙ্গামাটি জেলায় পাসের হার ৪৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ খাগড়াছড়ি জেলায় ৪৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

গতবছর কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ছিলো ৬৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, রাঙ্গামাটি জেলায় পাসের হার ৪৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ ও বান্দরবান জেলায় পাসের হার ছিলো ৬১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এবার শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা ১টি ও গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ৫টি। পাসের হার শূন্য এমন কলেজের সংখ্যা এবছর ও নেই। গতবছরও ছিলো না।

বিভাগ ভিত্তিক বিভাজন

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগেরর ফলাফল গতবছরের তুলনায় এগিয়ে থাকলে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ, মানবিক বিভাগে পাসের হার ৪৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

গতবছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ছিলো ৭৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, মানবিক বিভাগে পাসের হার ৫১ দশমিক ৬২ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ছিলো ৭০দশমিক ৮৫ শতাংশ।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031