উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাধ্যমিক বা এসএসসির ধারাবাহিকতায় উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসিতেও পাসের হার কমেছে । শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, খাতা দেখায় কড়াকড়ি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পাল্টানোয় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

চলতি বছর আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি-সব মিলয়ে ১০ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার হয়েছে ৬৮.৯১ শতাংশ। যা আগের বছর ছিল ৭৪.৭০ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে প্রায় ৫.৭ শতাংশ।

কেবল পাসের হার নয়, এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে জিপিএ ফাইভের সংখ্যাও। গত বছরের চেয়ে ২০ হাজারেরও বেশি কমেছে এই সংখ্যা।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কারিগরি এবং সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের চেয়ে এবার মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে ফলাফল খারাপ হয়েছে বেশি। গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশেরও বেশি কমেছে পাসের হার।

রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার কাছে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল তুলে দিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। পাসের হার ও জিপিএ ফাইভ কমে যাওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নাখোশ নন। বরং তিনি বেশ খুশি। তিনি বলছেন, খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতিটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারছেন তারা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় আরও মনযোগী হবে বলে আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী। আর এতে ভবিষ্যতে ফলাফল ধীরে ধীরে আরও ভালো হবে।

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৫ মে শেষ হয়। বর্তমান সরকারের আমলে চালু হওয়া রীতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময় ৬০ দিনের এক দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ করেছেন এই ফল। দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টাঙিয়ে দেয়া হবে এই ফলাফল। পাশাপাশি অনলাইন ও মোবাইল ফোনেরও ফল জানার সুযোগ রয়েছে।

সার্বিক ফলাফল

শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া তথ্যমতে এবার এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন। গত বছর যা ছিল ১২ লাখ তিন হাজার ৪৪০ জন। অর্থাৎ চলতি বছর পরীক্ষার্থী কমেছে ৪০ হাজারের মতো।

এবার এবার পাস করেছে মোট আট লাখ এক হাজার ৭১১ জন। গত বছর পাস করেছিল আট লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন।

এবার পাসের হার ৬৮.৯১ শতাংশ, গত বছর সেটা ছিল ৭৪.৭০ শতাংশ। এবার পাসের হার ৫.৭ শতাংশ কমেছে।

১০ শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে এবার জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। গত বছর যা ছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। অর্থাৎ কমেছে ২০ হাজার ৩০৭ জন।

এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল আট হাজার ৭৭১টি। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ৫৩২টি প্রতিষ্ঠানে।

আট বোর্ডে এইচএসসির ফলাফল

আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এবার এইচএসসির পরীক্ষার্থী ছিল নয় লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৮ জন। গত বছর যা ছিল ১০ লাখ সাত হাজার ৫৩ জন। এখানেও পরীক্ষার্থী কমেছে ৪২ হাজার ১১৫ জন।

চলতি বছর পাস করেছে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন, গত বছর যা ছিল সাত লাখ ২৯ হাজার ৮০৩ জন। এই দিক থেকে পাসের সংখ্যা কমেছে ৮৪ হাজার ৮৬১ জন।

চলতি বছর আট সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৬৬.৮৪ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৭২.৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ এখানে কমেছে ৫.৬৩ শতাংশ।

এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ জন। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ৪৮ হাজার ৯৫০ জন। এখানেও কমেছে ১৫ হাজার ৭০৮ জন।

মাদ্রাসা বোর্ড

পাসের হার সবচেয়ে বেশি কমেছে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে। চলতি বছর এই বোর্ডে পরীক্ষার্থীর পরিমাণ বাড়লেও গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি কমেছে পাসের সংখ্যা। সেই সঙ্গে কমেছে জিপিএ ফাইভ এর সংখ্যাও।

চলতি বছর মাদ্রাসা বোর্ডে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ৯৬ হাজার ৮০২ জন। গত বছর যা ছিল ৮৯ হাজার ৬০৩ জন। অর্থাৎ এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে সাত হাজার ১৯৯ জন।

এদের মধ্যে পাস করেছে ৭৪ হাজার ৫৬১ জন। গত বছর যা ছিল ৬৯ হাজার ২০ জন। অর্থাৎ পরীক্ষার্থী সাত হাজারের বেশি বাড়লেও পাস কমেছে চার হাজার ৪৫৯ জন।

চলতি বছর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার পাসের হার ৭৭.২ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৮.৩৭ শতাংশ। এখানে পাসের হার কমেছে ১১.১৭ শতাংশ।

মাদ্রাসায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছে এক হাজার ৮১৫ জন। গত বছর ছিল দুই হাজার ৪১৪ জন। কমেছে ৫৯৯ জন।

তুলনামূল ভালো করেছে কারিগরি বোর্ড

এইচএসসি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মতো কারিগরি শিক্ষাবোর্ডেও পাসের হার কমেছে এবার। তবে অন্য দুই বোর্ডের চেয়ে এখানে পাসের হার বেশি।

কারিগরি বোর্ডে এবার পরীক্ষা দিয়েছে ৯৭ হাজার ১৪ জন। গত বছর যা ছিল এক লাখ দুই হাজার ৪৪৮ জন। অর্থাৎ এই বোর্ডে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে পাঁচ হাজার ২৩৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৭৮ হাজার ৯০৪ জন। গত বছর পাস করেছিল ৮৬ হাজার ৪৬৯ জন। অর্থাৎ পাসের সংখ্যা কমেছে সাত হাজার ৫৬৫ জন।

চলতি বছর কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮১.৩৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৪.৫৭। এ বছর পাসের হার কমেছে ৩.২৪ শতাংশ।

এই বোর্ডে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে দুই হাজার ৬৬৯ জন শিক্ষার্থী, গত বছর যা ছিল ছয় হাজার ৫৮৭ জন। অর্থাৎ কারিগরি বোর্ডে জিপিএ ফাইভ কমেছে তিন হাজার ৯১৮ জন।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031