প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন চলতি বছর এসএসসির ধারাবাহিকতায় এইচএসসিতেও আগের বছরের চেয়ে খারাপ ফলাফলের প্রেক্ষিতে কত শতাংশ পাস করল, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি মনে করেন, । এটাই বড় কথা।

রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। চলতি বছর গত বছরের তুলনায় পাসের হার কম ৫.৭ শতাংশ। আর জিপিএ ফাইভ কম চেয়েছে ৩৫ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কত পার্সেন্ট পাস হলো, কত পার্সেন্ট পাস হলো না এটা বিবেচ্য বিষয় না। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়ার প্রতি মনযোগী হয়েছে, লেখাপড়া করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে ঘোষণা করি, বাংলাদেশকে আমরা নিরক্ষরতা মুক্ত করব। তার জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করি। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এবং উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেই। আজকে আমরা যখন দেখি, আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার আগ্রহ বেড়েছে। এমন কি এক সময় মাত্র ৩০ পার্সেন্ট কি ৪০ পার্সেন্ট ছেলে-মেয়ে পরীক্ষায় পাস করতো। আজকে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যখন পরীক্ষার ফলাফল হয়, কত পাস হলো, কত ফেল হলো নানা ধরনের কথা পত্র-পত্রিকায় লিখতে থাকে। তারা ভুলে যান যে আমরা সরকার গঠন করার আগে কত পাস করতো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন মানের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার গুনগত মান উন্নত হয়েছে। সার্বিকভাবে আমাদের রেজাল্ট যথেষ্ট ভালো। ভবিষ্যতে আরও মনযোগী হিসেবে লেখাপড়া করে জাতির মুখ উজ্জল করবে এটাই আমার প্রত্যাশা।’

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহটা কম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অথচ আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।’

বিজ্ঞান শিক্ষা বিস্তারে সরকারের উদ্যোগ বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কম্পিউটার তো অনেকেই চিনেই না এ অবস্থা, ব্যবহার তো করতই না। আমরা সরকারে আসার পর এ বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেই। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করার জন্য ১২ টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের করেছিলাম। আইন করে দিয়েছিলাম, ছয়টার কাজ শুরু করেছিলাম। সে ছয়টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই নামটা দিয়েছিলাম যাতে শিক্ষার্থীদের ভেতরে আগ্রহটা জন্মায়।’

‘আমাদের কোন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এখানে আমি প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের একটি মাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি আরও চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেই’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।

‘কারিগরি শিক্ষার ভোকেশনাল ট্রেনিংকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সবাই একই ধারায় শিক্ষা নেবে না। কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। আরও দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা নির্মাণ করছি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা কীভাবে গ্রহণ করা যায় তার উপর গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি ছেলে-মেয়েদের। ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি সমগ্র বাংলাদেশে। এভাবে আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষের কাছে নিয়ে যাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রোগ্রাম চালু করেছি। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে একেবারে গ্রামে বসেও ছেলে-মেয়েরা অর্থ উপার্জন করতে পারে সেই সুবিধাটা আমরা করে দিয়েছি।’

‘১০টি ভাষা শেখার অ্যাপ তৈরি করে দিয়েছি। যাতে যে কেউ যে কোন ভাষা জানতে পারে। বিদেশে যারা যাচ্ছে তাদেরকে আমরা ট্রেনিং দিয়ে দিচ্ছি।’

‘সেশন জট অনেকের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিত। পরীক্ষা কখন হবে তার ঠিক নাই, পরীক্ষার রেজাল্ট কবে পাবেন তারও কোন সুনির্দিষ্ট সময়-সীমা ছিল না। এ রকম একটা পরিস্থিতি আমরা পেয়েছিলাম প্রথমবার যখন আমরা সরকারে আসি। সেটাকে একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা, পরীক্ষার সময়টা বেঁধে দেওয়া এবং রেজাল্ট এই সময়ের মধ্যে দিতে হবে।’

পরীক্ষার ফলাফল প্রদান পদ্ধতিও আগের চেয়ে আধুনিক ও গতিশীল হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগে রেজাল্ট দিত স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টাঙিয়ে দেওয়া হতো। অথবা পত্রিকায় ছাপার জন্য বসে থাকতে হতো পর দিনের পত্রিকা খুলে রেজাল্ট নিতে হবে। সেই ঝক্কি-ঝামেলা আর নাই। ৯৬ সালে সকলের হাতে আমরা মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছিলাম। কম্পিউটার শিক্ষা দিয়েছি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে আমরা সারা বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করে দিয়েছি। এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রেজাল্ট পাওয়া যায়। এখন আর কষ্ট করে কাউকে কলেজ বা স্কুলে গিয়ে রেজাল্ট আনতে হয় না। ঘরে বসে রেজাল্ট পেতে পারে।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031