মাদক চোরাচালানীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে টেকনাফের পরিবহন সেক্টর । পরিবহন সেক্টরে মাদক চোরাচালানীদের আধিপত্যে সীমান্তে চলাফেরা করাই আজ বড় বেশী মুশকিল হয়ে পড়েছে। চলাচলের মাধ্যম যানবাহনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা প্রায়ই উঠে গেছে। এখানকার যাত্রীবাহি এবং মালবাহি যানে এখন ইয়াবা চোরাকারবারীদের মালিকানা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশংকা করা হচ্ছে, আগামী দু‘য়েক বছরে সীমান্তের পুরো পরিবহন সেক্টর মাদক চোরাচারাচালীনের কব্জায় চলে যাবে। স্থানীয়রা জানায়, পরিবহন সেক্টর ইয়াবা চোরাচালানীদের হাতে চলে গেলে জীবন মান উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হবে। মানুষের চলাচল একেবারেই অনিরাপদ হয়ে উঠবে।সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ যারা ইয়াবা পাচারকারী কাল তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী। পাচারকারী থেকে ব্যবসায়ী বনে রাতারাতি হয়ে যায় কোটিপতি। অল্পদিনেই কিনে তারা বিভিন্ন মডেলের গাড়ী। দেখাগেছে, টেকনাফে যারাই মাদক ব্যবসায়ী তাদের প্রত্যেকে গাড়ীর মালিক। এসব গাড়ী মালিক মাদক চোরাচালানীরা অনায়াসে বড় বড় ইয়াবার চালান তাদের রং বে-রংয়ের গাড়ীর যোগানে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। লোকজন জানায়, বিজিবি এবং পুলিশ কর্তৃক প্রতিনিয়ত বাস, সিএনজি, চাঁন্দের গাড়ী, মাহিন্দ্রা, টমটম, অটো রিকসাসহ যাত্রীবাহি গাড়ী থেকে কোন না কোন সময় ইয়াবার চালান উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যাত্রীবাহি গাড়ীর সিট বা অন্যস্থান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করছে। যানবাহনে অভিযানকালে পাচারকারীদের না পেয়ে বিভিন্ন সময় অহরহ নিরীহ যাত্রী প্রশ্নের মুখে পড়ছে। ফলে সীমান্তে সড়কে হয়রানী যেমন বাড়ছে অন্যদিকে যাত্রীদের দুর্ভোগও সমানতালে বাড়ছে। া৩য় পৃষ্ঠার ১ কলামে দেখুনাটেকনাফে পরিবহন(১ম পৃৃষ্ঠার পর)টেকনাফ সীমান্তের মালবাহি গাড়ী একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব গাড়ীর যোগানে করে প্রায় ইয়াবার বড় বড় চালান পাচার হয়ে থাকে। ভিন্ন জেলার চালক এবং হেলপার দিয়ে টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবার বদৌলতে হওয়া নব্য কোম্পানীরা সুকৌশলে মাদকের চালান দেশব্যাপী পৌঁছে দিচ্ছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ জুলাই (ঢাকা মেট্টো-ট-২০-৫১১১) নং ট্রাক গাড়ীতে এস.আই রাজেশ বড়–য়ার নেতৃত্বে শাহপরীরদ্বীপ হাইওয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার পিচ ইয়াবা বড়িসহ চালক এবং হেলাপারকে আটক করেন। এটি ছিল হাইওয়ে পুলিশের ইতিহাসে ইয়াবা উদ্ধারের বড় ঘটনা। ১৮ জুলাই (চট্টমেট্টো-ট-১১-২৫১৮) নং ট্রাক গাড়ীতে এস.আই জামাল হোছাইনের নেতৃত্বে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৬ হাজার পিচ ইয়াবা বড়িসহ চালক এবং হেলপারকে আটক করেন। ২০জুলাই (বগুড়া-ন-১১-০৯৩৯) নং পিকআপে অভিযান চালিয়ে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশ ৬হাজার পিচ ইয়াবাসহ চালক এবং হেলপারকে হাতে নাতে আটক করেন। একইদিন অভিনব কায়দায় মাইক্রোবাসে চালকের আসনে বেঁধে ইয়াবা পাচার কালে হোয়াইক্যং চেকপোষ্টে কর্তব্যরত জওয়ানরা অভিযান চালিয়ে ৭ হাজার পিচ ইয়াবাসহ চালককে হাতে নাতে আটক করেন।১৭জুলাই (চট্টমেট্টো-জ-১১-১৮২২) নং ইয়াছিন পরিবহন নামের স্পেশাল সার্ভিসে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ১৫হাজার পিচ ইয়াবাসহ হেলাপারকে আটক করেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উল্লেখিত গাড়ীর সব মালিক কিন্ত কোন না কোন ভাবে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানায়, মোটাংকের টাকার বিনিময়ে ধরা পড়লে ছাড়িয়ে নেওয়ার মিথ্যা আশ^াসে গাড়ী মালিক সিন্ডিকেটের বড় বড় চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে চালক হেলপাররা। এ কারণেই অভিযানের সময় চালক হেলপার আটক এবং গাড়ী জব্দের ঘটনা ঘটলেও গডফাদাররা থাকেন প্রায় অধরা। এভাবেই পার পাচ্ছে সীমান্তের মাদক ব্যবসায়ী গাড়ীওয়ালারা। টেকনাফের পরিবহন সেক্টর মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে স্বীকার করে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো: জামাল হোছাইন জানান, ইয়াবা পাচারের সুবিধার্থে এখানকার ইয়াবা কারবারীরা শুধু গাড়ী কিনছে। ধরা পড়লে সবকিছুর ব্যবস্থা করবে আশ^াসে চালক হেলপারদের বেশী টাকা দিয়ে গাড়ীর যোগানে করে ইয়াবা পাচার করছে। গোপন সংবাদ ছাড়া কোন গাড়ীতে করে ইয়াবা যাচ্ছে তা বুঝাই কঠিন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্র স্থাপন ছাড়া গাড়ী যোগে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন খাঁন জানান, ইয়াবা পাচারের সুবিধার্থে মাদক ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র গাড়ী কিনছেন ঠিক। পুলিশসহ সীমান্তের প্রশাসনও গাড়ী যোগে তাদের ইয়াবা পাচারের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখছেন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031