আদালত শেরপুরে নিজের কিশোরী মেয়েকে (১৫) ধর্ষণের মামলায় বাবা হানিফ উদ্দিনকে (৪৩) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন । একই সঙ্গে তাঁকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের শিশু আদালতের বিচারক (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় হানিফ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত হানিফ সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাট হদিপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, হানিফ উদ্দিনের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী তাঁর বড় মেয়ে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। হানিফ জুয়ার নেশায় আসক্ত। তাঁর স্ত্রী ছাগল লালন-পালন করে সংসার চালান। ধোপাঘাট হদিপাড়া গ্রামে তাঁদের একটিমাত্র বসতঘর। ওই ঘরের মেঝেতে কিশোরীর বাবা-মা ঘুমান। ছোট দুই ভাইবোনকে নিয়ে ওই কিশোরী চকিতে ঘুমায়। মামলার এক বছর আগে হানিফ রাতে হঠাৎ করে নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করেন। এরপর প্রায় রাতেই ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করতেন বাবা। কিশোরীর মা বিষয়টি টের পাননি। লোকলজ্জার ভয়ে সে-ও বিষয়টি তার মা বা অন্য কাউকে জানাননি। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আবারও মেয়েকে ধর্ষণ করেন হানিফ। এতে ওই কিশোরী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি মাকে জানায়। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মা বিষয়টি সদর থানা-পুলিশকে জানান। গত বছরের সালের ২০ অক্টোবর মা ও ওই কিশোরীকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন মা বাদী হয়ে স্বামী হানিফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সদর থানায় মামলা করেন। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুমিনুন্নিছা খানমের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ২২ ধারায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর জবানবন্দি নিয়ে গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়।

সদর থানা-পুলিশ গত বছরের ২৫ অক্টোবর জামালপুর থেকে হানিফকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিন তিনি অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. মোমিনুল ইসলামের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জীবন চন্দ্র বর্মণ হানিফ উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ শেষে আদালত আজ নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা হানিফকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. গোলাম কিবরিয়া। রায় ঘোষণার পর তিনি বলেন, তাঁরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

তবে, আদালতে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031