সিএনজি অটোরিকসা চালকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। পুলিশের টোকেন বাণিজ্য এবং খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবালকে অপমানের প্রতিবাদের অটোরিকসা চালকরা প্রায় আড়াই ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (ঢাকামুখী অংশ) অবরোধ করে রাখে। অবরোধ সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ চালকদের উপর লাঠিচার্জ করলে শনিবার (১৫জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে বড়তাকিয়া বাজার এলাকায় দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলতে থাকে। এসময় পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি চালায়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন ঘটনাস্থলে গিয়ে চালক ও চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবালের সাথে কথা বলে সন্ধ্যা ৭টায় মহাসড়ক থেকে অবরোধ সরিয়ে দেয়। তবে পুলিশের একটি অস্ত্র খোয়া যাওয়ার কারণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মিরসরাই থানার পাশাপাশি পাশ্ববর্তি সীতাকুন্ড থানা ও জোরারগঞ্জ থানা পুলিশও অবস্থান নিয়েছে।
পুলিশের লাঠিচার্জ ও চালকদের ইটপাটকেলে আহতরা হলেন, সমকাল পত্রিকার মিরসরাই প্রতিনিধি বিপুল দাশ, মিরসরাই থানার এএসআই জহির, কনেষ্টেবল মেহেরাবরু, চালক ও পথচারিদের মধ্যে রয়েছে আবু সাঈদ, ফয়সাল মাহমুদ, রিক্সা চালক ফিরোজ, ফারুক, বেলাল, সৈকত, পাবেল, ফজলুল, তাজুল, মুনসুর, গিয়াস উদ্দিন, দেলোয়ার, সবুজ, নুর উদ্দিন, আরাফাত, মাহবুবুল হক, আজাদ, সাকিব, করিম, নুরল নবী, আশরাফ, সাইফুলসহ কমপক্ষে ৫০জন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
বড়তাকিয়া আবুতোরাব সড়কে অটোরিকসা চালক আবু সাঈদ জানান, পুলিশ প্রতিমাসে টোকেনের মাধ্যমে প্রতিটি অটোরিকসা থেকে তিন’শ টাকা করে চাঁদা নেয়। ওই চাঁদা দিয়ে বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত মহাসড়কে গাড়ি চালানোর মৌখিক অনুমতি দেয়। এরপরও পুলিশ অটোরিকসা চালকদের হয়রানি করে এবং মামলা দেয়। শরীফ উদ্দিন নামে একজন জানান, শনিবার (১৫জুলাই) বড়তাকিয়া বাজার থেকে বিকাল সাড়ে ৩ টায় একটি অটোরিকসা নিয়ে খইয়াছাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল একটি জানাযায় যাচ্ছিলেন। এসময় জোরারগঞ্জ চৌধুরী হাট হাইওয়ে পুলিশের এএসআই জাকির ওই অটোরিকসাটি আটক করে। জাহেদ ইকবাল নিজের পরিচয় দিয়ে অটোরিকসাটি ছাড়ার অনুরোধ করলে ওই পুলিশ চেয়ারম্যানকে গালিগালাজ করে অটোরিকসা জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকী দেয়। এসময় পুলিশ সিএনজি চালকদেও লাঠিচার্জ করে। এ খবর বড়তাকিয়া বাজারের অটোরিকসা স্ট্যান্ডে পৌঁছলে চালকরা শত শত অটোরিকসা রেথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল পুলিশের চাঁদাবাজি ও তাকে অপমানে প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবরোধ ঘোষনা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অররোধের খবর পেয়ে বিকাল ৫টায় মিরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০ মিনিটের মধ্যে অবরোধ তুলে নিতে সময় দেন। কিন্তু তার আগে পুলিশ চালকদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করলে চালকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় পুলিশের উপর বড় বড় ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারতে থাকে স্থানীয় লোকজন। একপর্যায়ে ইটের আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ৪জন পুলিশ ও সাংবাদিক বিপুল দাশ বাজারের একটি দোকানে আশ্রয় নিলে বৃষ্টি মতো সেখানে ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারা হয়। এসময় চালকদের উপর পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। কিন্তু পুলিশের গুলি শেষে হয়ে গেলে চালক ও স্থানীয়রা দোকানে ঢুকে পুলিশের উপর হামলা চালায়। অবরোধকারীরা পুলিশের একটি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। এখনো পর্যন্ত অস্ত্রটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সংঘর্ষ ও অবরোধের খবর পেয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবালের সহযোগিতা নিয়ে চালকদের শান্ত করে। পরে চেয়ারম্যান ও অবরোধকারীদের সাথে বৈঠক করে তাদের দাবি আদায়ের আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা ৭টায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
খইয়াছড়া ইউনিয়নের চেয়াম্যান জাহেদ ইবকাল জানান, এখন থেকে কোন আটো রিকসা চালক পুলিশের কোন টোকেন নিবে না। মহাসড়কে চালকদের হয়রানি বন্ধ করা, টোকেন বানিজ্য বন্ধ করা, হাইওয়ে পুলিশের এএসআই জাকিরকে প্রত্যাহরসহ তাদের দাবি পূরণের জন্য আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দাবি আদায় না হলে আবার সড়ক অবরোধসহ কমসূচী দেয়া হবে। পুুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি তাদেও সাজানো নাটক। মুলত আমি এবং আমার জনগনকে ফাসাতে পুলিশ এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।
জোরারগঞ্জ চৌধুরী হাট হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ এসআই শফিকুর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন জানান, চালকদের সাথে কথা বলে অবরোধ সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করে দেয়া হবে।
এই রিপোর্ট লেখার সময় রাত সাড়ে ৮ টায় বড়তাকিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় সার্বিক বিষয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদেও অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াছমিন শাহিন কাকলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন, সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই) ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমানের উপস্থিতিতে বেঠক চলছে।