দুই দিনে মারা হলো দেড়শোর বেশি বিষধর গোখরা সাপ রাজশাহীর দুটি বাড়িতে । হঠাৎই বসতবাড়িতে সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ। গবেষকরা বলছেন, ডিম পাড়ার জায়গা কমে যাওয়ার কারণে মানুষের ঘরমুখী হচ্ছে এই সরীসৃপ প্রাণি।
গেল বুধবার রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাজদার আলীর শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় ২৭টি বিষধর গোখরা সাপ। এর পরদিন ওই ঘরেই পাওয়া যায় আরও একটি সাপ। এক থেকে দেড় হাত মতো লম্বা প্রতিটি সাপের বাচ্চাকেই পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
এর একদিন পরই জেলার তানোর উপজেলার ভদ্রখন্ড গ্রামের কৃষক আক্কাস আলীর বাড়ির রান্নাঘরের মাটি খুড়ে পাওয়া যায় ১২৫টি বিষধর গোখরা। ছোট ছোট এসব সাপের বাচ্চাগুলোকেও পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এই বাড়িতে গোখরার ১৩টি ডিমও পাওয়া যায়।
বাড়ির মালিকরা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থেই মেরে ফেলা হয় সাপগুলোকে। এরপর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। গবেষকরা বলছেন, কৃষি জমি ফাঁকা এবং ঝোঁপঝাড় কেটে ফেলায় বাড়ছে সাপের উপদ্রব। ডিম পাড়ার জায়গা কমে যাওয়ায় সাপেরা ছুটছে বসতবাড়ির দিকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম খালেকুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, শহর কিংবা গ্রাম বলে কোনো কথা না, কম-বেশি সবখানেই সাপ আছে। সাপেরা সাধারণত ঝোঁপঝাড়ের ভেতর ইঁদুরের গর্তে ডিম পাড়ে। কিন্তু প্রতিনিয়ত ঝোঁপঝাড় কমছে। ফলে সাপেরা বসতবাড়ির ইঁদুরের গর্তে গিয়ে ডিম পাড়ছে।
এই গবেষক বলেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন- মিলনের পর পুরুষ সাপটা অন্য জায়গায় চলে যায়। আর মা সাপটা গর্তে গিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম দেয়া শেষ হলে সেও অন্য কোথাও চলে যায়। ৬০ দিন পর সাপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এর এক সপ্তাহ পর বাচ্চা সাপগুলোর খোলস বদল হয় এবং চোখ ফোটে। এরপরই প্রায় সব সাপ একসঙ্গে গর্ত থেকে বের হতে শুরু করে।
এম খালেকুজ্জামান বলেন, সাপ মানুষকে প্রচণ্ড ভয় পায়। কিন্তু বাধ্য হয়ে তারা মানুষের বাড়িতে গিয়ে ইঁদুরের গর্তে ডিম পাড়ছে। আরও কারো বাড়িতে সাপ নেই, তা নয়। থাকতেই পারে। তবে সাপ নিজে আক্রান্ত না হলে কাউকে কামড় দেয় না। সাপের আতঙ্ক থাকলে বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিড রাখা যেতে পারে। এতে বাড়িতে সাপ যাবে না।
অনেক দিন ধরেই নিজের বাড়িতে সাপ সংরক্ষণ ও পালন করছেন জেলার পবা উপজেলার যুবক বোরহান বিশ্বাস রোমন। মাজদারের বাড়িতে ২৭টি সাপ মেরে ফেলার পরদিন তিনি ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। খুঁজেছিলেন আর কোনো জীবিত সাপ আছে কি না। তবে তিনি কোনো সাপ পাননি।
সাপগুলো মেরে ফেলায় মর্মাহত রোমন। ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণির বাঁচার অধিকার আছে। এতোগুলো সাপের একসঙ্গে মৃত্যু দেখে খুব খারাপ লাগছে। সাপগুলো দেখার পর আমরা যারা সাপ নিয়ে কাজ করি তাদেরকে খবর দেয়া যেত। আমরা সাপগুলোর জীবন বাঁচাতে পারতাম। বাড়ির লোকজনকেও নিরাপদে রাখতাম। যেভাবে সাপ মারা হয়েছে সেটাও একটা ঝুঁকি।’
রাজশাহীর সহকারী বন সংরক্ষক একেএম রুহুল আমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত তিন বছরে রাজশাহীসহ সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলে রাসেল ভাইপার ও গোখরা সাপ অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে অচিরেই তারা জনসচেতনামূলক কার্যক্রম হাতে নেবেন। এতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বলে মনে করেন বনবিভাগের এই কর্মকর্তা।