জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখায় এর কঠোর সমালোচনা হয়েছে । আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম রবিবার সংসদে বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আপনারা রায় দিতে থাকুন, আমরা সংসদে তা পাস না করলে কার্যকর হবে না।’ এই রায়ের মাধ্যমে বিচারপতিরা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা।
শেখ সেলিম জানান, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় সংসদ বহাল রেখেছে বলেই তা কার্যকর হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায় সংসদ কার্যকর করবে না।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ৭২ এর সংবিধান প্রণয়ন করেছে কারা। গণপ্রতিনিধিরা। এই সংবিধানের আলোকেই সবকিছু হয়েছে। রক্তে লেখা এই সংবিধান বাদ দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘জিয়া ক্ষমতায় এসে সংবিধান স্থগিত করেছিল। আমার বলতে লজ্জা হয়, তখনকার প্রধান বিচারপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এরশাদ সাহেবের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছে। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।’
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সামরিক শাসনকে বৈধ ঘোষণা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পর প্রধান বিচারপতি ছিলেন রুহুল আমিন। সেনাসমর্থিত সরকার যে রায় লিখে দিতো তিনি সে অনুযায়ী রায় দিতেন। পরে তার নাম হয়ে গিয়েছিল বিচারপতি মেজর রুহুল আমিন।’
বিচারপতিদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আজ পর্যন্ত কয়জন বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন? একজনেরও করেননি। বরং তদন্ত হওয়ার পর তা বন্ধ করেছেন। বিচারপতি জয়নুল আবেদিন, গ্রেনেড হামলার তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন যিনি, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য দুদক চিঠি দেয়, সেই তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বন্ধ হয়েছিল।’
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে শেখ সেলিম বলেন, ‘আপনি অপরাধ করলে আপনার বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেবে? রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ইমপিচমেন্ট করা যাবে, আর আপনাকে করা যাবে না। আপনি কি আইনের ঊর্ধ্বে? আপনাকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি, সেই রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচমেন্ট করা গেলে আপনাকে কেন করা যাবে না?’
সেলিম বলেন, ‘এসব জাজমেন্ট করে আপনারা দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমাদের ভারত সবখানে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে। তাহলে আপনাদের ভয়টা কিসের? কী কারণে আপনারা তাতে বাধা দিচ্ছেন।’
বিচারপতিরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেন রাজনৈতিক বক্তৃতা দেন। আপনারা তো তা দিতে পারেন না। কী কারণে দেন? অশুভ শক্তির সঙ্গে মিশবেন? সেই আশা বাদ দেন। বাংলাদেশে আর সেই সুযোগ নেই। সংবিধান সেই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা বা সহযোগিতা করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’
এমিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘উনি নাকি ডক্টর। কোথাকার ডক্টর তা আমার জানা নেই। উনি কি মুরগির ডাক্তার, নাকি ছাগলের, নাকি ভেড়ার ডাক্তার। উনি একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিয়েছেন।’
ড. কামালকে ৭২ এর সংবিধান প্রণেতা হিসেবে মানতে নারাজ সেলিম। তিনি ড. কামাল ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা কতবড় মুনাফিক না, সুবিধাভোগী লোক। তারা সংবিধানের সঙ্গে সংঘর্ষ লাগাতে যায়, যাতে সুবিধা ভোগ করতে পারেন।’
বিচারপতিরা পাকিস্তানের চিন্তা-চেতনা বাংলাদেশে আমদানি করতে চান বলেও অভিযোগ করেন সেলিম। সেটা বাংলাদেশের মানুষ আর কোনোদিন কবুল করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিচারপতি অপসারণ ইস্যু নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা।