চট্টগ্রাম কাস্টমস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারেনি । সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি ৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করে দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আদায় করেছে ৩৬ হাজার ৭০৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার ৯১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম। তবে সমাপ্ত অর্থবছরে অর্জিত হওয়া এ রাজস্ব চট্টগ্রাম কাস্টমসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ হাজার ৪০৮ কোটি ১১ লাখ টাকা বেশী রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব আদায় করেছিল ২৭ হাজার ২৪৪ কোটি ১ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্যের আমদানি কমে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম প্রতিরোধে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আগস্ট, নভেম্বর ও জানুয়ারি মাস ছাড়া বাকি ৯ মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমস তার মাসিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
সমাপ্ত অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই মাসে ২ হাজার ৩৪০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, আগস্টে ২ হাজার ৯৬৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ৯০ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ২৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার ৪৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৩ হাজার ৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার ৮২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৩ হাজার ৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ২৫৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ডিসেম্বরে ৩ হাজার ৩৯৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ২২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
জানুয়ারিতে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ২৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা, মার্চে ৩ হাজার ৩১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ২০৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৩ হাজার ৫৩৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ৩১৯ কোটি ১৫ লাখ, মে মাসে ৩ হাজার ৯৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় ৩ হাজার ৫২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং জুন মাসের ৪ হাজার ৬৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন হাজার ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
যেসব পণ্য থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব থেকে বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হাইস্পিড ডিজেল। এখান থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এরপর সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল সিমেন্ট ক্লিংকার হতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, মোটর সাইকেল ও পিস্টন ইঞ্জিন হতে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা, পাম অয়েল হতে ৯৫৫ কোটি টাকা, মোটর কার হতে ৯৪০ কোটি টাকা, আদার ক্যান সুগার হতে ৯২১ কোটি টাকা, পেট্রোলিয়াম অয়েল হতে ৭৮৩ কোটি টাকা, আপেল হতে ৭১৩ কোটি, অপরিশোধিত তেল বা ক্রুড অয়েল হতে ৬৫০ কোটি এবং ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ্বালানী তেল হতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেন বলেন, বিগত অর্থবছরগুলোর চেয়ে সমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা বেশী ছিল। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করেছি। বকেয়া রাজস্ব আদায়ে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হতো। জনবল সংকট কারণে এসব বিষয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির কারণ সম্পর্কে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্যের আমদানি কমে যাওয়াসহ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম প্রতিরোধে ব্যর্থতা ও বকেয়া রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন, পিস্টন ইঞ্জিন (৫০সিসি-২৫০সিসি) মোটর সাইকেল, পিস্টন ইঞ্জিন মোটর কার, লৌহার তৈরি পাইপ ও টিউব, সিমি প্রোডাক্ট আয়রন, ট্রান্সমিশন যন্ত্র, গ্যাস লাইনে ব্যবহৃত পাইপ ইত্যাদি পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতি হয়েছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা কাজ করছেন। অনেককেই একের অধিক বিভাগের কাজ করতে হয়। এজন্য এআইআর শাখায় কাজের গতি বাড়ানো, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং লোকবল সংকট দূর করতে পারলে কাস্টমস থেকে লক্ষ্যমাত্রা আদায় সম্ভব বলেও জানান তারা।