এক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কুয়েতে । তাদের মামলায় জড়িয়ে দেয়ায় এ আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। তবে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এ আতঙ্ক কমাতে কাজ করছে। কুয়েতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় খৈতান ও জালিভ আল শুইয়ুখ নামের দুই কোম্পানিতে গত বুধবার থেকে ধর্মঘট শুরু করেন বাংলাদেশি হাজার খানেক শ্রমিক। তাদের দাবি ছিল, বকেয়া বেতন, ওভার টাইম ও অবকাশকালীন পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তা করা না হবে ততক্ষণ তারা কাজে যোগ দেবেন না। তবে ধর্মঘটের প্রথমদিকে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশিদের সমঝোতা হলেও আটকের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৮ জন ও রোববার আরো ৯ জনকে আটক করে কুয়েত পুলিশ। এর মধ্যে নয় জনের বিরুদ্ধে পলাতক দেখিয়ে মামলা করে স্থানীয় কুয়েত কোম্পানি। ফলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করে। কুয়েত পুলিশের কাছে বর্তমানে আটক থাকা গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. একরাম হোসেন (চাটখিল), আবদুল করিম, মামুন, আমির হোসেনসহ নয় জন। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, কুয়েতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার পর গতকাল সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশিরা। তবে মামলার আসামি হয়েছেন এমন কয়েকজন এখনও পলাতক। এসব বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে বেশির ভাগই ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী। কুয়েত টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, শনিবার থেকে এসব শ্রমিক কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া মামুন। এসব শ্রমিকের মুখপাত্র হিসেবে তিনি কুয়েত টাইমসকে বলেন, ধর্মঘটকারী এসব শ্রমিকের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। শনিবার থেকে এসব শ্রমিক কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত রয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের দিয়ে দাসের মতো কাজ করানো হয়। প্রতিদিন আমাদের কাজ করতে হয় ১৬ ঘণ্টা। নির্ধারিত ৮ ঘণ্টার বাইরে যে ৮ ঘণ্টা কাজ করানো হয় তার জন্য বাড়তি কোনো অর্থ আমাদের দেয়া হয় না। নিয়োগকারীরা এসব ওভারটাইমের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তা পরিশোধ করা হয় না। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া। আমাদের পরিবার আছে। দেশে টাকা পাঠাতে হয়। আমাদেরও খেতে হয়। বেতন না দিলে আমরা কি খেয়ে বাঁচবো? তাই আমরা নিয়মিত বেতন চাই। মামুন বলেন, গত সপ্তাহে তার প্রায় ১৫ জন সহকর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশি। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার সময় বেশকিছু পুলিশ সদস্য আমাদের ফ্ল্যাটে আসে। তারা ওইসব শ্রমিককে খুঁজতে থাকে, যারা কাজে যোগ দেয়নি। এমন শ্রমিক ছিলেন ১৫ জন। পুলিশ সদস্যরা তাদের একেকজন করে ডেকে নেয়। এরপর জলিব পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, তারা বেতনের দাবিতে কাজে যোগ দেননি। তাই তাদের গ্রেপ্তার করে আটক রাখা হয়েছে। কিন্তু আসল সত্য হলো কোম্পানিগুলো তাদের গ্রেপ্তার করতে বলেছে পুলিশকে। কুয়েতে বসবাসরত বাংলাদেশি আবুল কাশেম মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধর্মঘট ডাকার পর নেতৃত্বদানকারী কয়েকজনকে কোম্পানির কাজে পলাতক দেখিয়ে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর দুই দফায় ১৫ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে আটজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নজরুল ইসলামও একই ধরনের কথা জানিয়ে মানবজমিনকে বলেন, কুয়েতে বাংলাদেশিদের মান মর্যাদা ভূলণ্ঠিত করছি আমরা নিজেরাই। গত কয়েক মাস ধরে কুয়েতে অসন্তোষ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের এ বিষয়টি কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। এ বিষয়ে দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (শ্রম বিভাগ) আবদুল লতিফ খান বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাকি বেতন শিগগিরই পরিশোধ করা হবে। যারা বেতন পাননি তাদের একটি তালিকা করা হবে এবং তাড়াতাড়িই তা শোধ করা হবে। আমরা কোম্পানির ম্যানেজারদের সঙ্গে আলোচনায় সর্বশেষ এতটুকুই জানতে পেরেছি। ১৫ জন শ্রমিক আটক সম্পর্কে তিনি বলেন, ম্যানেজাররা বলেছেন, ফৌজদারি অপরাধের কারণে ওইসব শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবদুল লতিফ খান বলেন, এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। এক্ষেত্রে আমি শ্রমিকদের আইন অনুসরণ করে চলতে বলবো। কোম্পানি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব শ্রমিকের অনেকে ম্যানেজারদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। তা সত্ত্বেও আমি অনুরোধ করেছি তাদেরকে গ্রেপ্তার করে যেন শাস্তি দেয়া না হয়। এ বিষয়ে আমরা সমঝোতামূলক আলোচনা করছি। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |