মা শিল্পী বেগমের ছয় বছরের কামরানকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল। পুত্রকে অভাব থেকে মুক্তি দিতে পিতা কয়েছ মিয়া পাড়ি জমিয়েছেন ওমানে। মার স্বপ্ন আর পিতার ইচ্ছা সবই এখন শেষ। চাচা আল-আমিন কামরানকে হত্যা করে নিজ ঘরের মাটিতে পুঁতে রাখে। মৌলভীবাজার মনুমুখ ইউনিয়নের মাধুহাটি গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। শিশু কামরানের লাশ উদ্ধারের পর গোটা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পুলিশ আল-আমিন ও তার দুই বন্ধু রবিউল ও জনিকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ২৯শে জুন সকাল ৯টায় কামরান নিখোঁজ হয় বাড়ি থেকে। বিকালে একটি ফোন থেকে তার চাচা রাসেলের ফোনে কল করে এক ব্যক্তি ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ টাকার জন্য ৭২ ঘণ্টার সময় দেয়। বিষয়টি মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ অনুসন্ধানে নামে। পরে কামরানের আত্মীয় লিটন মিয়া বাদী হয়ে অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে রোববার রাত সাড়ে ১২টায় অপহৃত শিশু কামরানের পিতার চাচা মৃত ছখাওত মিয়ার ছেলে আল-আমিন (২৬)কে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক তারই ঘরের মাটি খুঁড়ে কামরানের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ সময় লাশের মুখে ছিল স্কচটেপ আঁটা।  শিশু কামরানের ঘরের এক ভিটে পরেই আল-আমিনের ঘর। এই বাড়িতে আরো ৩টি ঘর আছে। গতকাল সকালে সাধুহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কামরানের বাড়িতে শোকাহত জনতার ভিড়। কামরানের দাদা  এবাদত মিয়া (৬৫)কে ঘিরে বসে আছেন এলাকার বয়স্ক বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। তারা এবাদত মিয়াকে  সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ক্বারি মো. খুরশেদ আলী (৯২) বলেন, এতো বয়সে এমন ঘটনা এলাকায় শুনিনি। তার কথা একই বাড়ির লোক এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হয়েও কিভাবে একটি শিশুকে হত্যা করতে পারলো। গ্রামের এক তরুণ জানান, কামরান নিখোঁজ হওয়ার পর সবাই যখন তাকে  খোঁজাখুঁজি করছিলেন, মাইকিং করা হচ্ছিল এই সময় ঘাতক আল-আমিন নিজ ঘরেই ছিল। এই তরুণ বলেন, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ঘর থেকে আল-আমিন বের হয়ে যাওয়ার পর কামরানের চাচা রাসেলের কাছে ফোন যায়। নিহত শিশু কামরানের দাদা এবাদত আলী জানান গতকাল রাতে শিশু কামরানের মা শিল্পী বেগম ছেলে হত্যার খবর শুনেই মূর্ছা যান। পরে তাকে  মৌলভীবাজার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শিল্পী বেগম সংজ্ঞা ফিরলেই চিৎকার করছেন, আবার মূর্ছা যাচ্ছেন। খালা শাশুড়ি রোশনা বেগম ও মামা শ্বশুর আব্দুল কালাম তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত শিশু কামরানের চাচা আল-আমিন এবং তার বন্ধু রবিউল ও জনি মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২ নারী সহ আরো ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সোহেল আহমদ জানিয়েছেন অপহৃত শিশুর পরিবারের দেয়া একটি মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তু ফোন একবার ব্যবহার করে টাকা চাওয়া হয়। তারপর থেকে বন্ধ ছিল। রোববার রাত সাড়ে ১২টায় ঘাতক আল-আমিনকে আটক করার পর লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031