গরুবাহী নসিমন থেকে চাঁদা আদায় করছে স্থানীয় একটি চক্র। স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তিরা চাঁদা না দিলে গরুবাহী যানবাহনের চালককে মারপিট করছেনরাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জ এলাকায়। চাঁদাবাজদের সঙ্কেত না মেনে পালাতে গেলে গরুবাহী যানবাহনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করেন তারা।
আজ রোববার ভোরে এমনই একটি গরুবাহী নসিমন চাঁদা না দিয়ে পালাতে গেলে চাঁদাবাজরা চালককে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটান।
এতে মনিরুল ইসলাম (২৫) নামে নসিমনের ওই চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে গোদাগাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
মনিরুল ইসলামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলীনগর ভূতপুকুর গ্রামে। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান। এই দুর্ঘটনায় মনিরুলের সহকারীও আহত হয়েছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় দুটি গরু মারা গেছে। আহত তিনটি গরুকে জবাই করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ওই গরুবাহী নসিমনটি রাজশাহীর সিটিহাটে যাচ্ছিল। ওই সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক চাঁদার জন্য নসিমনটিকে থামতে সংকেত দেয়। কিন্তু চালক তাতে সাড়া না দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় চাঁদাবাজরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে নসিমনটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী গরুবাহী যানবাহনগুলো থেকে সুলতানগঞ্জ এলাকায় চাঁদা আদায় করেন স্থানীয় জামরুল, জাকু সোহেল, কালু, রাজিব, এনামুল ও তার ছেলে নবী। গোদাগাড়ী পৌরসভার নামে এই চাঁদা আদায় করা হয়। আর চাঁদার একটা অংশ যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার কাছে। রবিবারও এসব চাঁদাবাজরা সেখানে চাঁদাবাজি করছিলেন।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় এক ব্যক্তি সেখানকার একটি ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। তাতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর প্রায় ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে ঘিরে ধরেছেন কয়েকজন ব্যক্তি। তারা তার কাছে জানতে চাইছেন কেন টাকা আদায় করা হচ্ছে। ওই যুবক নিজে কোনো মন্তব্য না করে নবীর সঙ্গে কথা বলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এনামুল ও তার ছেলে নবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কথা বলতে গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবুর মুঠোফোনেও ফোন করা হয়। তবে তিনি ধরেননি।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা দুঃখজনক। সকালে ঘটনা শোনার পর তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। কয়েকজন চাঁদাবাজের নামও জানতে পেরেছেন। খুব দ্রুতই তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। ৫-৬ মাস আগে ওই এলাকায় একবার পৌরসভার নামে চাঁদা আদায় করা হতো। তখন জানতে পেরে তিনি সেটি বন্ধ করেছিলেন।
ওসি জানান, এখন ভোররাতের দিকে একটি চক্র ওই এলাকায় গরুবাহী যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করেন। তবে এ বিষয়ে কেউ পুলিশকে আগে জানাননি। দুর্ঘটনার পর তিনি বিষয়টি জানতে পেরে গোদাগাড়ী পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়র তাকে জানিয়েছেন- চাঁদা আদায়ের সঙ্গে পৌরসভার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।