সমালোচনার মুখে লাখ টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব থেকে সরে আসার পর বাগেরহাটের রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকেও সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা। এই প্রকল্পটিকে সুন্দরবনবিনাশী আখ্যা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়ার তাগাদাও দিয়েছে তারা।
রবিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। বিশিষ্ট কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ এই আহ্বান জানান।
আবুল মকসুদ বলেন, ‘রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে সরকার যে সকল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তার সবই নেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিবেচনায় এই প্রকল্প বাতিল করা হোক।’
সুন্দরবনের অদূরে বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এই কেন্দ্রটি ২০১৯ সালে উৎপাদনে যাবে ধরেই কাজ চলছে। তবে এই প্রকল্পটি নেয়ার পর থেকেই পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এর ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি, এই কেন্দ্রটি সুন্দরবনের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সরকার অবশ্য এই উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সব ধরনের সুরক্ষা থাকবে। তাই এটি সুন্দরবনের ক্ষতির কারণ হবে না।
তবে বাপা ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ভারতের গুজরাটে সুন্দরবনের মতো একটা প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কাতেও এরকম একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি দেশের গণতান্ত্রিক সরকার নাগরিক সমাজের উদ্বেগ বিবেচনা করে প্রকল্প বাতিল করে থাকে। প্রকল্পটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাতিলও হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকারের এই আচরণে সারাদেশের ও বিশ্বের সুন্দরবন ও পরিবেশপ্রেমী মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। দুই চারজন স্বেচ্ছা বিভ্রান্ত মানুষ ছাড়া সবাই রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল চান।’
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুতের উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল থেকে উৎপাদন হবে মাত্র ১৩২০ মেগাওয়াট। এটুকু বিদ্যুৎ না হলেই কি নয়? আমরাও বিদ্যুৎ চাই কিন্তু সুন্দরবনের বিনিময়ে নয়।’
বামপন্থি রাজনীতিক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভা আজ সন্ধ্যায় পোল্যান্ডে শুরু হচ্ছে। আমরা চাই না, সুন্দরবন ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত হোক। আমরা চাই, ইউনেস্কো সুন্দরবনকে অপমান নয়, বন বিনষ্টের ভুল কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ ও ভারত সরকারকে তাদের বনবিরোধী কার্যক্রম থেকে নিবৃত্ত করুক।’