রাশিয়ান এক তরুণী এবার প্রেমের টানে শেরপুরে ছুটে এসেছেন । প্রেমিকের গলায় মালা পরিয়ে বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। রাশিয়ান ওই তরুণীর নাম সিভেতলেনা। তার প্রেমিক ধর্মকান্ত সরকার শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধীরেন্দ্র কান্ত সরকারের ছেলে।
শুক্রবার রাত ৯টায় শেরপুর শহরের গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে সনাতন ধর্ম মতে যজ্ঞ সম্পাদন করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইস্কন’র শেরপুর শাখার সদস্যরা।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন প্রেমিকের পরিবারের লোকজন, বন্ধু-বান্ধব ও ইস্কন ভক্তসহ চার শতাধিক অতিথি। তাদের খাবারের তালিকায় ছিল পুষ্প অন্ন, ভুনা খিচুরি, সয়াবিনের রসাসহ ১৪ ধানের নিরামিষ।
ধর্মকান্ত সরকারের পরিবার ও ইস্কন মন্দির সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য ধর্মকান্ত সরকার চলে যান রাশিয়ায়। ভর্তি হন মস্কোর আছরাখান টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তেল-গ্যাস-পেট্রল জ্বালানি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় যাওয়া-আসা শুরু হয় মস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণা কন্সিয়াসনেস’ (ইস্কন) প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা মন্দিরে।
ইস্কনের নিয়মানুযায়ী মন্দিরের বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হন ধর্মকান্ত সরকার। সেখানেই ২০১৩ সালে মন্দিরের গুরুদেব আনন্তাকৃষ্ণা মহারাজের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে রাশিয়ান তরুণী সিভেতলানার। পরে দীর্ঘদিন দুজনের মধ্যে চলে ই-মেইলে আলাপচারিতা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ধর্মকান্ত সরকার দেশে চলে আসেন। দেশে চলে এলেও দুজনের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এর সূত্র ধরেই এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন সিভেতলেনা। তারা কিছুদিন সন্ন্যাসীভিটায় থেকে চলে আসেন শেরপুর শহরের ইস্কন মন্দিরে। দুজনই যুক্ত হন এ মন্দিরের সেবামূলক কাজের সঙ্গে। পরে তারা পরস্পরের ইচ্ছায় তাদের প্রেমকে পরিণয় দিতেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সনাতন ধর্মীয় আচার অনুযায়ী শুক্রবার রাতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
প্রেমিক ধর্মকান্ত সরকার জানান, বর্তমানে তিনি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে হোটেল ব্যবসা করছেন। সেভেতলেনা এবং তার মধ্যে দীর্ঘদিনের পরিচয় থেকেই তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা দুজনই নিরামিষভোজী এবং ‘ইস্কন’ অনুসারী। দাম্পত্যজীবনে সুখী হতে তিনি সকলের প্রার্থনা কামনা করেছেন।
শেরপুর ইসকনের সেবায়েত অপূর্ব জগন্নাথ দাশ ব্রহ্মচারী জানান, শুক্রবার রাত ৯টায় গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মকান্ত সরকার ও সিভেতলেনার বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেন, প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা রাশিয়ান তরুণী সেভেতলানার সঙ্গে নালিতাবাড়ী সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের ধর্মকান্ত সরকারের বিয়ে হিন্দুধর্ম মতে সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মকান্ত সরকার রাশিয়া থাকতেই তাদের মাঝে পরিচয়, অতঃপর প্রেম এবং পরিণয়। আমরা তাদের সুখী দাম্পত্যজীবন কামনা করি।