দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ঘিরে ভিড় করছে , যেখানে এক বছর আগে এই দিনে হামলা চালিয়ে বিদেশি ১৭ নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। টিভি মিডিয়ার পাশাপাশি প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরাও ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন।
নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞের বছরপূর্তির দিনে শনিবার সকাল থেকেই সাংবাদিকরা ভিড় করতে থাকেন হলি আর্টিজান এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোস্তারাঁটিকে ঘিরে সাংবাদিকদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পাশাপাশি অনেক বিদেশি সাংবাদিককেও ঘটনাস্থলে খবর সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি টেলিভিশন মিডিয়াকে আর্টিজান রেস্তোরাঁটিতে দেখা যায়। এছাড়া প্রিন্ট, অনলাইন ও টিভি মিডিয়াকেও ঘটনাস্থলে দেখা যায়। টিভি মিডিয়াগুলোকে বছরপূর্তির শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করছে। এছাড়া অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর সংগ্রহ করতে তৎপর দেখা গেছে।
বাংলাদেশি মিডিয়ার পাশাপাশি অনেক বিদেশি গণমাধ্যমেও উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের মধ্যে জাপান ও ইতালির গণমাধ্যম, বিবিসি বাংলা, সিএনএনসহ অনেক বিদেশি মিডিয়ার সাংবাদিকরা আর্টিজান এলাকায় এসেছেন। সাংবাদিকরা শ্রদ্ধা জানাতে আসা নিহতদের স্বজন এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছেন একটি টিভি মিডিয়ার সংবাদকর্মী সাব্বির। ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, ‘নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের দিন আমি সরাসরি সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছিলাম। বছরপূর্তির দিনেও আমি এখনো সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছি। সেদিনেও কথা মনে পড়লে আজও মাঝে মাঝে আমি আঁতকে উঠি। ওই হামলার ভয়াবহতা মনে পড়লে আজও আমার গা শিউরে ওঠে।’
একটি অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক মিশু জানান, ‘সেই ভয়াল রাতটির কথা যেন চোখের সামনে ভাসছে। বহু জায়গায় সংবাদ সংগ্রহে যাই কিন্তু আজ এখানে সংবাদের খোঁজে এসে মনটা কেমন জানি ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। তবুও আসা। সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি নিহতদের। পরপারে ভালো থাকুক তারা।’
আর্টিজান এলাকার কর্তব্যরত পুলিশের এক উপপরিদর্শক জানান, সকাল থেকেই বিভিন্ন চ্যানেলের সাংবাদিকরা এখানে এসেছেন। বিদেশি সাংবাদিকরা এসেছেন সংবাদ সংগ্রহ করতে। আমরা সবাইকে সহযোগিতা করছি।
গত বছরের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি।
পরদিন শনিবার সকালে রেস্তোরাঁয় জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। তবে এর আগে শুক্রবার রাতেই জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন। অভিযান শেষে যৌথ বাহিনী বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত এবং মোট ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। অভিযানে ছয় জঙ্গিও নিহত হয়।
নিহত ২০ জনের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, নয়জন ইতালিয়ান, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
বছরপূর্তির এই দিনে আর্টিজান হোটেল এলাকায় সকালে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। ইতালির রাষ্ট্রদূতও শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া গুলশান থানা আওয়ামী লীগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরাও ৭৯ নম্বর সড়কে এসেছেন।