আজকের তরুণ প্রজন্ম কতটা প্রস্তুত আছে আমি জানি না যে সংবাদটা আমি দেবো সেটা শোনার জন্য । কিংবা খবরটা শোনার পর কেমন লাগবে আপনাদের। হয়তো ভাববেন আমিও শেষ পর্যন্ত স্বার্থপর হয়ে গেলাম যাই হোক, খবরটা হলো আমি প্রথম আলো ছেড়ে দিচ্ছি। আমার ভালোবাসার প্রথম আলো থেকে গতকালই ইস্তফা দিলাম। অফিসিয়াল প্রসেস শেষ হতে যে ক’দিন লাগে তারপরেই চলে যাবো।
আমি জানি আপনারা বিস্মিত হয়েছেন। আপনাদের মনে একগাদা প্রশ্ন জাগছে। জানতে চাইছেন আমি কেন ছাড়তে যাচ্ছি। আপনারা অনেকেই জানেন আমি এ জীবনে সাংবাদিক ছাড়া আর কিছু হতে চাইনি। না বিসিএস ক্যাডার, না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, না অন্য কিছু। গত ১৫টা বছর আমি শুধু সাংবাদিকতাই করেছি। এর মধ্যে ১২টা বছরই ছিলাম প্রথম আলোতে।
সাংবাদিকতা ছিল আমার ধ্যান জ্ঞান। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া তৈরি হয়নি। তবে আমি সারা জীবন আর্থিকভাবে সৎ এবং মোটামুটি একটা জীবনযাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গত তিনটা বছর বিশেষ করে গত ছয়টা মাস জীবনযাপন করতে গিয়ে আমাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। ৬০ লাখ টাকার ঘুষের অফার আমি গালি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু পকেটে ৬০ টাকাও ছিল না। আরেকটু ভালোভাবে বাঁচাটা জরুরি হয়ে উঠেছিল।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সুযোগ প্রথম আলোর চেয়ে অন্য কোথাও বেশি আছে বলে আমার জানা নেই। আমি আমার ১২টা বছর এখানে খুব আনন্দ নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বেতন হয় ওয়েজবোর্ডে। প্রথম আলো সেই ওয়েজবোর্ড পুরোপুরি দেয়। কিন্তু সেই বেতনে আমার চলছিল না। আর সততা ছাড়া আমি জীবনযাপনের আর কোনো উপায় জানি না। বাধ্য হয়ে আমি দুটো জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। একটা ইউরোপের একটি দেশের দূতাবাস, আরেকটা উন্নয়ন সংস্থা।
আপনারা অনেকেই জানেন আমি প্রবাসী শ্রমিক আর তরুণদের চাকরি বাকরি নিয়ে কাজ করতাম। দুটো কাজই ডেডিকেটলি করার চেষ্টা করেছি। জানি না কতটা পেরেছি। আমি ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের হেড হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছি। আমার ভালোলাগার জায়গা অভিবাসন বিষয়ে, প্রবাসীদের অধিকার নিয়ে আরেকটু কাজ করতে পারবো। সপ্তাহে দুদিন ছুটি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিবাসন নিয়ে কিছু করারও ভাবনা আছে।
তবে আপনারা যারা তরুণ, যারা চাকরি প্রার্থী তাদের জন্য আমি কীভাবে কাজ করবো জানি না। শুধু বলতে পারি আমি চেষ্টা করবো কোনো না কোনোভাবে আপনাদের পাশে থাকার। সাংবাদিকতা বা লেখালেখিতে আমি কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকতে চাই। কারণ, আমি প্রথম আলো থেকে ইস্তফা দিয়েছি, সাংবাদিকতা থেকে পুরোপুরি নয়। তবে জানি না কোন গণমাধ্যম কীভাবে আমাকে সেই সুযোগটা দেবে।
প্রথম আলো ছেড়ে যাওয়ার এই অনুভূতি আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো না। আমার পুরোনো এক বস যিনি একটা গণমাধ্যমের সম্পাদক তিনি প্রথম আলো ছাড়বো শুনে আমায় বলেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা শরিফুল হাসানকে মিস করবে। আমি বলতে চাই, রক্ত মাংসের সাথে মিশে থাকা এই আমিও খুব মিস করবো সাংবাদিকতাকে।
আজকের তরুণ প্রজন্ম এবং আপনারা আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছেন খুব কম মানুষই তা পায়। একজন ক্রিকেটারকে তার জীবনের সেরা সময় জাতীয় দল ছাড়তে হলে কিংবা অবসরে যেতে হলে কেমন লাগে বলেন তো তাও যদি হয় স্বেচ্ছা ঘোষণা। আমি গত একটা মাস কতোটা কেঁদেছি, এখনো কষ্ট পাচ্ছি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি খুব মিস করবো আমার প্রথম আলো, প্রতিটা সহকর্মী, অফিসের প্রতিটা কোনা, আপনাদের মতো লাখো তরুণ, দিনে রাতে তাদের বার্তা, আকুতি, আরো অনেক কিছু। আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের সবার জন্য আমার ভালোবাসা থাকবে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031