ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটার মানচিত্রটি । মাত্র এক দশক আগেও কুয়াকাটা সৈকতের দৈর্ঘ্য ছিল ১৮ কিলোমিটার আর প্রস্থ ছিল তিন কিলোমিটার। কিন্তু সাগরের অব্যাহত ভাঙনে কুয়াকাটা সৈকতের প্রস্থ কমে দাঁড়িয়েছে ৪০-১১০ ফুটে। কমে যাচ্ছে দৈর্ঘ্যও। সাগরের জোয়ারে সময় কুয়াকাটা সৈকত থাকে পানিতে তলিয়ে। ভাটার সময় পর্যটকেরা সৈকতে হাঁটতে পারেন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে। সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিবছর সৈকত সংলগ্ন মনোরম পর্যটন স্পটগুলো ভাঙলেও তা রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের ঝাপটায় সম্প্রতি সৈকতের বালুক্ষয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর প্রথমে শিকার হচ্ছে সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন প্রধান আকর্ষণ ঝাউ বাগান, তালবাগান, নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্কের একাংশ, শুঁটকি পল্লী। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কড়ই গাছের বিশাল আয়তনের বাগানটি। ফলে আগামী দিনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় প্রধান অবলম্বন হিসেবে থাকা এসব গাছ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাস্তবে সৈকতের বালুক্ষয় রোধে বা গাছগুলো রক্ষায় কারো মাথা ব্যথা নেই বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
গত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ার মিলিয়ে জুন মাসে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত অন্তত ১২ মিটার ধুয়ে নিয়ে গেছে, এমনটির ধারণা করছেন স্থানীয় ভূমি অফিস ও আশপাশের মানুষ। উপড়ে পড়ে আছে শত শত গাছ। প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে বালু ক্ষয়ের প্রভাবে সৈকতের ব্যাপক ক্ষতি হলেও সরকারের কোনো মহল দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সরকারের পানিসম্পাদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৈকতের বালুক্ষয় (ভাঙন) রোধে বিষয়টির করণীয় নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিবির পর্যবেক্ষণ চলছে। বাস্তবে, কবে নাগাদ এটি শুরু হতে পারে ও কিভাবে শুরু করা হবে এ নিয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের মাঝে ব্যাপক সংশয় লক্ষ করা গেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ সৈকতের কয়েকটি স্পট ইতোমধ্যে ঢেউয়ের ঝাপটায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন ঝাউ বাগান, তালবাগান, নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্কের একাংশ, শুঁটকি পল্লী তছনছ হয়ে গেছে। সৈকতে বনাঞ্চলের শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে। এভাবে বালুক্ষয় অব্যাহত থাকলে কুয়াকাটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ভিতরে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পর্যটন শিল্পের বিনিয়োগকারীরা। ফলে হুমকির মুখে পড়বে কুয়াকাটার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সরকারের রাজস্ব খাতে এবং এখানকার পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীদের ওপর।
কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিমে খাজুরা ও পূর্বদিকে গঙ্গামতি পর্যন্ত বন বিভাগের সৃজিত বাগানের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে খাজুরা বেড়িবাঁধটি যে কোনো সময় পানির তোরে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী। ঝুঁকি নিয়ে ওই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ বাস করছেন। বাঁধটি ভেঙে গেলে প্রায় ১৩-১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্টসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সেখানকার অধিবাসীরা। এ দিকে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্য সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনের পর পর্যটকদের চিওবিনোদনের জন্য দর্শনীয় স্পট হিসেবে গড়ে তোলা কুয়াকাটার জাতীয় উদ্যান ইকোপার্কও ভূমি ক্ষয়ের কবলে পড়ে বিলীন হতে চলছে। অবিলম্বে কুয়াকাটাকে বাঁচাতে ভূমিক্ষয় রোধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন এখানে বেড়াতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা বন কর্মকর্তা ওয়াজিদ কুমার রুদ্র জানান, সমুদ্র তলদেশে পানি বাড়ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এক বছরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। কুয়াকাটা ভাঙন থেকে রক্ষা কীভাবে পেতে পারে এ জন্য ভারতের একটি টিম দেখে গেছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সি-বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি এ বি এম সাদিকুর রহমান বলেন, কুয়াকাটার ভাঙন রোধ করার জন্য বিশ্বব্যাংক আর্থিক সাহায্য করলেই অক্টোবরে কাজ শুরু হবে।
কলাপাড়া উপজেলা (পাউবো) কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, ডিবিপি পানিসম্পাদ মন্ত্রণালয় মিটিং হয়েছে। শুধু কুয়াকাটা নয়, টোটাল খাজুরা বেড়িবাঁধটি রক্ষা করার পরিকল্পনা চলছে।
Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031