ঈদ আনন্দ তাদের জন্য ভাবাই অকল্পনীয় যৌবন যাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় । তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থা যাদের দেয় না মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা। কেমন কাটলো তাদের ঈদ?
এ আকুতি যে শুধু যৌনকর্মীদের নয়, নিদারুণ কষ্টে আছে এখানকার শিশুরা। ক্ষুধা আর অপুষ্টির কারণে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে তারা। কোন কোন শিশু বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, ঝরে পড়া ফুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে শহরের ব্যস্ততম এলাকায় বিক্রি করে।
পাঁচ থেকে ছয় বছরের এক শিশুর কাঁধেও সংসাদের জোয়াল। সে প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ফুল কুড়িয়ে মালা তৈরি করে এবং বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে মালা বিক্রি করে। শিশুটি বলে, ‘মানুষের কাছে রুটি, কলা, বিস্কুট চাইয়া খাই। দিনে ভাত খাই না। খালি রাইতে ভাত খাই।’
এর চেয়ে আরেকটু বেশি বয়সী এক শিশু বলল, তার যা আয় হয় তা দিয়ে বাজার করে আনে। সে প্রতিটি রোজাই রেখেছে।
ঈদের নতুন জামা কাপড় কোথায়?- জানতে চাইলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শিশুটি। তার চাওনি বলে দেয়, নতুন ঈদ পোশাক জোটেনি।
রোজা ও ঈদ কীভাবে কাটলো জানতে চাইলে এক যৌনকর্মী বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। রমজান মাসে আমাদের খদ্দের একেবারেই কমে যায়। রাত পোহালেই দুই/তিনশ টাকা ঘরভাড়া গুণতে হয়। তারপর বাজারঘাটতো আছেই। জীবন বাঁচাতে পারি না।… ঈদ আপনাদের মত ভদ্রলোকদের জন্য, আমাদের মত মানুষদের জন্য নয়।’
আরেক নারী বলেন, ‘সাধ আছে সাধ্য নেই। ঈদে নতুন জামা কাপড় পড়বো, ভালমন্দ খাব, এসব কে না আশা করে? কিন্তু রমজানে আমাদের পেটের ভাতই জোটে না। ঈদ করবো কীভাবে?’।
যৌনকর্মীদের সংগঠন নারী মুক্তির সভাপতি বলেন, ‘২০১৪ পতিতাপল্লী উচ্ছেদের পর থেকে যৌনকর্মীরা ঈদ কাকে বলে জানে না। ওই বছর রমজান মাসে পল্লীটি একটি চক্র উচ্ছেদ করে। আইনি প্রক্রিয়ায় জায়গাটায় কার্যক্রমের অনুমতি পেলেও নানা আতঙ্কে জমাতে পারেনি কার্যক্রম। ফলে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে পড়ে।’
নারী মুক্তির নেতা বলেন, ‘আমরা কোন অন্যায় করি না, দেহ বিক্রি করে জীবন ধারণ করি। কিন্তু এ সমাজ আমাদের মেনে নিতে চায় না। আমাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। রমযান মাস আসলে আমাদের ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।’
২০১৪ সালের ১২ জুলাই রমজান মাসে প্রায় দুইশ বছরের পুরনো কান্দাপাড়া যৌনপল্লীর সাড়ে আটশ কর্মীসহ দুই হাজার নারী ও শিশুকে একরাতেই তাদের আবাসন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এরপর এলাকাটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় হাইকোর্টের রায়ে যৌনকর্মীরা আবার সেখানে ওই এলাকায় বসবাস করতে পারেন।
নারী মুক্তির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ যৌনকর্মীর বংশ পরম্পরায় এখানেই জন্ম। এ পেশা ছেড়ে অন্য কোন পেশা আমাদের জানা নেই। তাছাড়া সমাজ আমাদের সহজভাবে মেনে নেয় না। আমাদের কবর পর্যন্ত সামাজিক কবরস্থানে দিতে দেয়া হয় না। আমাদের নিজস্ব কবরস্থান রয়েছে, সেখানেই আমাদের দাফন করা হয়। কবরস্থানেরও বেশিরভাগ জায়গা দুস্কৃতিকারীরা বেদখলে রেখেছে। আমাদের খবর কে রাখে? আমরা তো মানুষই না।