বাঁচার জন্য মিথ্যা বলেছিলেন, সেই মিথ্যাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে গৌরাঙ্গ দাসের জন্য। ভয়ে নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে। আর সে পরিচয়ের কারণেই সাজা শেষেও জেল থেকে মুক্ত হতে পারছেন না তিনি। ১ বছরেরও বেশি সময় আগে সাজার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও ৫৩ বছর বয়সী গৌরাঙ্গ দাস ‘বিদেশি বন্দি’ হিসেবে এখনও অতিরিক্ত কারাবাস করছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।
২০০৪ সালের ৩রা নভেম্বর ৪টি পিস্তলসহ কোম্পানিগঞ্জের বাবুলনগর থেকে র্যাবের হাতে আটক হন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পাইকরাজ গ্রামের গপেশ দাসের ছেলে গৌরাঙ্গ দাস ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বাবুলনগর গ্রামের মৃত মুসলিম আলীর ছেলে জলিল মিয়া। এরা দু’জনই মূলত চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। মদ, বিয়ার থেকে শুরু করে কসমেটিকস, পান-সুপারি সীমান্ত দিয়ে এপার-ওপার করেন তারা। র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর ভয়ে নিজেকে ভারতীয় হিসেবে পরিচয় দেন গৌরাঙ্গ দাস। নিজের নাম ও বাবার নাম ঠিকই রাখেন তবে ঠিকানা দেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের। র্যাবকে জানান, মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি থানার ধরমবস্তির বাসিন্দা তিনি। তার বিরুদ্ধে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হয় এ পরিচয়েই।
২০০৪ সালের ৬ই নভেম্বর গৌরাঙ্গ দাস ও জলিল মিয়াকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। অবশ্য জেলে পাঠানোর আগেই আদালতের মাধ্যমে দু’জনকে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ২০০৬ সালের প্রথম দিকে পুলিশ এ মামলায় চার্জশিট দেয়। ২০০৭ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত বিশেষ আদালত সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ গৌরাঙ্গ দাস ও জলিল মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। ২০১০ সালে জামিনে জেল থেকে বের হয়ে যান জলিল মিয়া কিন্তু বিদেশি বন্দি হিসেবে জেলে দিন কাটাতে থাকেন গৌরাঙ্গ দাস। জেলের রেয়াত নিয়মানুযায়ী ২০১৬ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হলেও জেলেই থাকতে হয় গৌরাঙ্গ দাসকে। কারা কর্তৃপক্ষ অবশ্য তার মুক্তির ব্যাপারে চেষ্টা করে। কারা মহাপরিদর্শককে লেখা এক চিঠিতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর ভারতীয় আরো দুই বন্দির সঙ্গে গৌরাঙ্গ দাসকে ফেরত পাঠাতে পুলিশি প্রহরায় তামাবিল চেকপোস্টে পাঠানো হয়। তামাবিল চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ এবং বিজিবির উপস্থিতিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র মাধ্যমে ডাউকি ইমিগ্রেশন পুলিশের নিকট হস্তান্তর করতে চাইলে সংশ্লিষ্টদের গ্রহণের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ করেনি।
গৌরাঙ্গ দাস আবার ফিরে আসেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। তিনি এখন ‘রিলিজ প্রিজনার’ (নং : ১/১৬) হিসেবেই আছেন সিলেটের কারাগারে। ভারতে প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার ৫ মাস পর জানা যায় গৌরাঙ্গ দাস ভারতীয় নাগরিক নন। তিনি সিলেটেরই বাসিন্দা। এ তথ্য তিনি নিজেই দেন জেল কর্তৃপক্ষকে। গত ৭ই মার্চ গৌরাঙ্গ দাস সিলেটের অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত বিশেষ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বরাবরে ‘বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ায় কারাগার হতে মুক্তি পাওয়ার আবেদন’ শিরোনামে ‘স্ব-ব্যাখ্যাত’ এক আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, ‘আমার মূল ঠিকানা হচ্ছে, নাম- গৌরাঙ্গ দাস, পিতা- গপেশ দাস ওরফে গণেশ চন্দ্র দাস, সাং- পাইকরাজ, থানা-গোয়াইনঘাট, জেলা-সিলেট। র্যাব আমাকে যখন ধৃত করে তখন আমি ক্রসফায়ারের ভয়ে ভারতীয় ঠিকানা বলি। মূলত আমার বাড়ি বাংলাদেশে এবং আমি বাংলাদেশের নাগরিক।’
তবুও মুক্তি মেলে না গৌরাঙ্গ দাসের। গৌরাঙ্গ দাসের এ অসহায়ত্বের বিষয়টি জানতে পেরে সাহায্যে এগিয়ে আসে জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি সিলেট জেলা শাখা। ১৩ই মার্চ সোসাইটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মামলার বিচারিক আদালতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে গৌরাঙ্গ দাসের মুক্তি প্রার্থনা করা হয়। সোসাইটির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আল-আসলাম মুমিন মানবজমিনকে জানান, আমাদের আবেদনের জবাবে আদালত বলেছেন, রায় হওয়ার পর এখন আর বিষয়টি তার এখতিয়ারে নেই। অ্যাডভোকেট আল-আসলাম মুমিন বলেন, আদালতের পরামর্শে পরদিনই তারা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হন এবং গৌরাঙ্গ দাসের মুক্তির ব্যাপারে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হলেও গৌরাঙ্গ দাসের মুক্তির ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতির খবর মেলেনি।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |