পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সব খাতে ১৫ শতাংশ ভোট আরোপের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন । সেই সঙ্গে লাখ টাকার ওপরের ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবেরও বিরোধী তিনি।
সোমবার বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট নিয়ে আমরাও নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় আতঙ্কিত। ভ্যাটের কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় কি না। আবগারি শুল্কের জন্যও মানুষ আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।’
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন। এখন সংসদে সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হচ্ছে। গতানুগতিক আলোচনায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা না করলেও এবার আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীরাও বিশেষ করে আবগারি শুল্ক এবং ভ্যাট প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা করছেন।
সমালোচনার মুখে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের বিষয়টি নিয়ে পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজেট প্রস্তাবে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো সংশোধন করা হবে।
২৯ জুন সংসদে এই বাজেট পাস করে এবং প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কিছু সংশোধনী আসতে পারে বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে বাজেটের ত্রুটিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষ কষ্ট পায়। বাজেটে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হবে কি না, ব্যাংকের টাকার ওপর শুল্ক দিতে হবে কি না, চালের শুল্ক থাকবে কি না বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘অসময়ে বন্যা চলে আসায় হাওরাঞ্চলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের কাজই হলো লাভ বাড়ানো। এ জন্য বাজারে চালের সংকট দেখা গিয়েছিল।’
সরকারের কাছে এখন পর্যাপ্ত চাল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি খুব শিগগির এই সংকট কেটে যাবে। তাছাড়া বর্তমানে ৫২ হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানি করা হচ্ছে। যেকোনো দিন খালাস হয়ে যাবে। এতে চালের দাম কমে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের চাল উৎপাদনে আগ্রহী করতে চালের আমদানির ওপর শুল্ক ধার্য করেছিলাম। কিন্তু এখন চলমান সংকট মোকাবেলায় চালের ওপর আমদানি শুল্ক বাতিলের কথা ভাবছে সরকার।’
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। কেন না গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার কারণে অনেক প্রকল্প থেকে বিদেশিরা চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা ফিরে এসেছে। আশা করছি সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আগামী অর্থবছর মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হবে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ২৮ দশমিক ৮৯ ভাগ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ৬৫ ভাগ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ২৭ ভাগ। আমি থাকাকালীন গত আট বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ কখনো নিম্নমুখী হতে দেখিনি।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামীতে আমরা নতুন ভিত্তি বছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও হিসাব করব। এখন সেটি নিয়ে কাজ চলছে। আমরা এশিয়ান টাইগারের চামড়া নয়, এশিয়ান টাইগারই হবো।’
সংবাদ সম্মেলনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম, আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।