তিনি চলচ্চিত্রে এসে ভিলেন রূপটাই যেন বদলে দিয়েছিলেন।  আটপৌরে ঢঙে অনেকটা ঢাকাইয়া ভাষার আমেজে তার ডায়ালগ চলচ্চিত্র দর্শকদের আনন্দের খোরাক জোগায়। ফলে ভিলেন হয়েও নায়কের জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি।  ‘সানডে-মানডে ক্লোজ কইরা দিমু’- এই জনপ্রিয় ডায়লগের অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কথা মনে আছে?

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই খলনায়ক সাংসদ-নেতার ভূমিকাও পালন করেছেন। কিন্তু সেটা চলচ্চিত্রের পর্দায়। এবার বাস্তবে  ঢাকা থেকে সংসদ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

আগামী সংসদ নির্বাচনেই এই স্বপ্ন পূরণ করার আগ্রহ পুষছেন মনে মনে। তার ঘনিষ্ঠজনদের এমনটাই বলেছেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ না বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন, তা খোলাসা করেননি চৌকস এই অভিনেতা।

সিনেমার মতোই ব্যক্তিজীবনেও অভিজাত ডিপজল ১৯৯৪ সালে ঢাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি তখন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। সিনেমাপাড়াতেও বেশ দাপুটে অভিনেতা, তা খলনায়ক কিংবা নায়ক। এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আর সব রাজনীতিকের মতো বিপাকে পড়েন ডিপজল। সিনেমার পর বাস্তবেও ভিলেন বনে যান তিনি। কারাগারেও যেতে হয় তাকে। তার ঘনিষ্ঠরা বলেন, এক-এগারোতে ডিপজল ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে যে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তা বেনজির।

পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে ছিলেন ডিপজল। বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সভা-সেমিনারে দীর্ঘকাল দেখা যায়নি তাকে। সিনেমাতেও অভিনয় করেননি অনেক দিন। সবশেষে ২০১৫ সালের এপ্রিলের শুরুতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রকাশ্যে আসেন ডিপজল। ওই দিন সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্যই এই বাংলাদেশ হয়েছে। আমি টুঙ্গিপাড়ায় আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমি তার গড়া দলের একজন হয়ে থাকতে চাই। তবে এরপর আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি তাকে। দলের কোনো সভা-সেমিনারেও দেখা যায় না সচরাচর। তবে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়েই তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসেন।

ডিপজলের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র  বলেন, তিনি এখন আবার সিনেমায় সময় দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে রাজনীতি করতে চান। তবে তার বড় ইচ্ছে ঢাকার সংসদ সদস্য হওয়া। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তিনি ঢাকার কোন আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন তাও খোলাসা করে বলেননি। শুধু এটুকু বলেছেন, সময় হলে সব বলবেন।

১৯৫৮ সালের ১৫ জুন ঢাকার মিরপুরের বাগবাড়িতে জন্ম নেয়া ডিপজলের বাংলা সিনেমায় আগমন হয় পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবরের হাত ধরে। তার প্রথম ছবি ‘টাকার পাহাড়’। ছবিটিতে নায়ক ডিপজলের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মিষ্টি।

এরপর তিনি আবিদ হাসান বাদল পরিচালিত একটি ছবিতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। তারপর দীর্ঘ বিরতি। নব্বই দশকের শেষ দিকে এসে নতুন পরিচয় নিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন ডিপজল। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘তেজী’ ছবিতে তিনি প্রথম ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই ছবি রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয়। অবস্থা এমন হয়েছিল যে ডিপজল মানেই ছবি হিট। টানা কয়েক বছর ভিলেন হিসেবে দাপটের সঙ্গে অভিনয়ের পর বিরতি নেন তিনি।

২০০৪ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে পুরোপুরি নতুনভাবে আসেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন তিনি। ছবিটি হিট হলে আবার আলোচনায় আসেন শক্তিমান এই অভিনেতা।

চলচ্চিত্রে সফল ডিপজল রাজনীতিতেও কেমন সাড়া ফেলেন সেটা আগামী সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলেই বোঝা যাবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031