প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী এবং ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হিসেবে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্তিকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে তিনি এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, প্রবাসে বৈধভাবে কর্মরত এবং ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীসহ সকল প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসে বৈধভাবে কর্মরত এবং ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা কল্যাণ বোর্ডের সদস্য না হওয়ায় তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সহযোগিতা দেয়া সম্ভব হতো না। আজ থেকে তাদের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। তারা এখন থেকে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে বাংলাদেশের মিশনসমুহে সরাসরি উপস্থিত হয়ে সরকার নির্ধারিত ‘কল্যাণ ফি’ জমা দিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা কল্যাণ বোর্ডের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও সহায়তা গ্রহণ করতে পারবেন।’
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের আরেকটি দাবি ছিল সকল প্রবাসী কর্মীদের ইন্স্যুরেন্স সুবিধার আওতায় আনা। এজন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে একটি বিশেষায়িত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
মন্ত্রী জানান, প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের জন্য আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার সুবিধার্থে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল এবং অভিবাসী কর্মী অধ্যুষিত জেলায় আবাসন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশগামী ও বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের সেবা প্রদানের জন্য বিমানবন্দরস্থ প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে সুনির্দিষ্ট পোশাকধারী জনবল নিয়োগসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী গ্রিসে দুইজন ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে তাদের অনলাইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তার সঙ্গে কনফারেন্সে যোগ দেন গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে গমন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ও স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এসব ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং একইভাবে প্রবাসে বৈধভাবে কর্মরত কিন্তু কল্যাণ বোর্ডের তালিকাভুক্ত না, তারাও নিয়মিতভাবে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। তারা দেশের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছেন। কিন্তু বিদেশ গমনের সময় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে সরকার নির্ধারিত কল্যাণ ফি না দেওয়ার কারণে এসব কর্মী ও তাদের পরিবার বোর্ড প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিদেশে কর্মকালীন সময়ে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে কেবল সদস্য না হওয়ায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যেমন প্রবাসে অসুস্থতা, আইনগত সহায়তা, লাশ দেশে আনা, দাফন খরচ, সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সহযোগিতা, আর্থিক অনুদান অন্যতম। এসব অনিবন্ধিত প্রবাসী কর্মী ও ডায়াসপোরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা।’
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদেরকে নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি দেশের আপামর জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি, সংস্থা ও প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে গ্রামে গ্রামে, পাড়া মহল্লায় বহুল প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা প্রবাসী কর্মীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সৌদি আরব, জর্ডান ও মালয়েশিয়ায় কর্মরতদের জন্য “প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার” স্থাপন করেছি। এই কল সেন্টারকে প্রবাসী তথা দেশের সর্বস্তরের জনগণের কাছে পরিচিত করতে হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’
তিনি বলেন, বিদেশে অসুস্থ ও মৃত্যুবরণকারী কর্মীর লাশ পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও খুব শিগগির অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়া হবে। এছাড়াও বিমানবন্দরে আগত ও প্রত্যাগত কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফ্রি মোবাইল ফোন সেবা দেয়া হচ্ছে।
নুরুল ইসলাম বলেন, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের সহায়তায় বিদেশে মৃত্যুবরণকারী কর্মীর লাশ দেশে আনয়ন, বিমানবন্দর থেকে লাশ হস্তান্তরের সময় তাৎক্ষণিকভাবে লাশ পরিবহন ও দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তীতে তিন লাখ টাকার আর্থিক অনুদান এবং অসুস্থ কর্মীদের এক লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্যের চেক দেয়া হচ্ছে। এসব অর্থ চেকের মাধ্যমে দেয়া হয়।
এছাড়া প্রবাসী কর্মীর বিদেশস্থ নিয়োগকর্তা অথবা অন্য কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ, ইন্স্যুরেন্স, বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট আদায় করে তাদের পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আর্থিক অনুদান প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজড করা হয়েছে। যে কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে কর্মীর পরিবারের কাছে আর্থিক অনুদানের চেক পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের সচিব শামছুন নাহার বলেন, ‘সাড়ে তিন জাহার টাকায় কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়া যায়।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, মোহাম্মাদ আজহারুল হক, মন্ত্রণালয়ের দপ্তর, সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।